রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। ঈদের আগে এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে দোকানিরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের মনে আরেক শঙ্কা ভর করেছে। তা হলো পুড়ে যাওয়া দোকানের জায়গায় তাঁরা নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমন ব্যবসায়ীদের অনেকেই কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তাঁদের কথা, আগে বিভিন্ন মার্কেটে আগুন লাগার পর এমন দেখা গেছে যে যাঁরা প্রকৃত দোকানি, তাঁরা আর দোকান ফেরত পাননি। অন্য কেউ তা দখল করে নিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে কীভাবে দ্রুত ব্যবসা শুরু করা যায়, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। তাঁরা দ্রুত পুনর্বাসন চান। ব্যবসায়ী নেতারাও তাঁদের এই দাবির সঙ্গে একমত।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাঁদের সম্পদ বলতে অবশিষ্ট আর কিছু নেই। এখন উচিত হবে, সরকারি পর্যায় থেকে দ্রুত বরাদ্দ দিয়ে এসব ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা। ব্যবসায়ীদের মনে সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে এই জায়গা তাঁরা আবার ফিরে পাবেন কি না। এই জায়গা ফিরে না পেলে তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে জানিয়ে হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘যে ক্ষতি হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখানে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁরা ব্যাংকঋণ নিয়ে আবার ব্যবসায় ফিরতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা কম। তাই তাঁদের জন্য সরকার থেকে থোক বরাদ্দের দাবি জানাব আমরা, যাতে ব্যবসায়ীরা দ্রুত এখানে নতুন করে ব্যবসা শুরু করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টাটা অন্তত করতে পারেন।’
রাজধানীর ডেমরা এলাকার বাসিন্দা সঞ্চয় ও সাধন। অনন্যা শাড়িঘরের মালিক এই দুই ভাই। এই বাজারে তাঁদের দুটি দোকান ছিল। দুটিই পুড়ে গেছে। অ্যানেক্স মার্কেটের সামনের এলাকায় অসহায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। অনেকে তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
সঞ্চয় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দুই দোকানে কোটি টাকার ওপরে মালামাল ছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ মালামাল ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে আমদানি করা। কোটি টাকার সম্পদ নিমেষেই ছাই হয়ে গেল।’
জানা গেল, আজ মঙ্গলবার দুই ভাইয়ের পরিকল্পনা ছিল সকালে এসে দ্রুত দোকান খুলে মালামাল জায়গামতো পাঠিয়ে দেওয়া। গতকাল বেচাকেনার পর লাখ দশেকের মতো টাকা দোকানে রেখে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই টাকা সঙ্গে নিয়ে গেলেও হয়তো কিছুটা বেঁচে যেতেন তাঁরা। কিন্তু বিধি বাম।
দুই ভাই সমস্বরে বলেন, ‘এখন আমাদের একটাই ভয়, দোকান ফিরে পাব কি না। নতুন করে শুরু করতে পারব কি না। কারণ, এর আগে যেখানে এমন অগ্নিকাণ্ড হয়েছে, সেখানকার অভিজ্ঞতা ভালো নয়। জায়গা কেউ না কেউ দখল করে নেন। আগের ব্যবসায়ীরা আর ফিরতে পারেন না। বঙ্গবাজারে যেন সেই অবস্থা না হয়, তার জোর দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে কিছু না জানালেও বঙ্গবাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ভেতর চারটি মার্কেট ছিল—বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট। এসব মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান ছিল। তার প্রায় সব কটি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বঙ্গবাজারের পাশে অ্যানেক্স টাওয়ার মার্কেটটি সাততলাবিশিষ্ট। এই ভবনেরও একাধিক তলায় আগুন লেগেছে। দুপুরের পরও সেখানে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছিল।
এর দক্ষিণ পাশে আছে মহানগর কমপ্লেক্স। দোতলা এই মার্কেট টিনের। সেখানেও আগুন লাগে। এর পাশে পুলিশ সদর দপ্তর। এর ভেতরে একটি পাঁচতলা ভবনে দুপুর ১২টার দিকে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
এ ছাড়া পুলিশ শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট কাজ করে। আগুন লাগার পর আশপাশের দোকানপাটের মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়।
বঙ্গবাজারের সামনে ইসলামিয়া মার্কেট। সেই মার্কেটের এম এন কালেকশনের মালিক মো. মাহবুব বলেন, ‘যেখানে আগুন লেগেছে, সেখান থেকে আমাদের দোকানে হেঁটে আসতে ১০ থেকে ১২ মিনিট লাগে। আগুন ছড়িয়ে পড়ায় আমরাও মালামাল সরিয়ে ফেলছি।’