ডলার
ডলার

বিবিএসের তথ্য

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব মাথাপিছু আয়ে

দেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে এখন ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। ডলারের হিসাবে বেড়েছে মাত্র সোয়া ১ শতাংশ। আর টাকার হিসাবে বেড়েছে ১২ শতাংশ।

ডলারের দামের প্রভাব পড়েছে দেশের মাথাপিছু আয়ে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মাথাপিছু আয় সেভাবে বাড়েনি। মার্কিন ডলারে গড় মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। আর টাকার হিসাবে মাথাপিছু আয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত সোমবার রাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব।

দেড়-দুই বছর ধরে ডলারের দাম বেশ বেড়েছে। ৮৬ টাকার ডলারের দাম উঠেছে ১১৭ টাকায়। ফলে মাথাপিছু আয়ে এর প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৮৪ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ৩৫ ডলার বেড়েছে। ডলারে মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র সোয়া ১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার।

এ বছর বিবিএস ডলারে মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি করেছে প্রতি ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৯৭ পয়সা ধরে। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ১১৭ টাকা ঠিক করেছে। ফলে অর্থবছরে শেষে চূড়ান্ত হিসাব করার সময় ডলারে মাথাপিছু আয় আরও কমতে পারে।

অন্যদিকে টাকার অঙ্কে মাথাপিছু আয় এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১২ শতাংশের মতো। অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে, টাকার অঙ্কে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩২ হাজার ৭৮৪ টাকা বেশি।

ডলারে মাথাপিছু আয়ের হিসাব সম্পর্কে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর ধরেই ডলারে মাথাপিছু আয় অনেকটা এক জায়গায় আছে। এর মানে হলো, ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা অনুসারে জীবনযাত্রার মান তেমন বাড়েনি। জাতীয় আয়ে গরিব মানুষের ভাগ কমেছে। গরিব মানুষের আয় কমেছে। আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় আছে। তাই গরিব মানুষের আয় বাড়ানোর সুযোগ বেশ সীমিত।

মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয়সহ যত আয় হয়, তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে এই হিসাব করা হয়।

কোভিডের পর থেকে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয়ে খুব বেশি অগ্রগতি নেই। ২০২১-২২ অর্থবছরে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় হয়। ওই অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। পরের বছর তা কমে২ হাজার ৭৪৯ ডলারে নামে। এ বছর আবার তা বেড়ে ২ হাজার ৭৮৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। তিন বছর ধরে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭০০ ডলারের ঘরে আছে।

১০ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে

গত ১০ বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। বিবিএসের হিসাবে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ ডলার। পরের আট বছর একটানা মাথাপিছু আয় বেড়েছে। কোভিডের আগপর্যন্ত অর্থনীতিও বেশ চাঙা ছিল। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কাছাকাছি উন্নীত হয়। এর ফলে মাথাপিছু আয়েও তার প্রতিফলন দেখা গেছে।

অন্যান্য

মাথাপিছু আয় ছাড়াও বিবিএসের ওই প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ-এসবের সাময়িক হিসাব দেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হবে বলে সাময়িক হিসাব দিয়েছে বিবিএস। গত অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। বিবিএস বলছে, এই লক্ষ্য অর্জিত হবে না।

এদিকে গতবারের তুলনায় কৃষি ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে বলে মনে করছে বিবিএস। বিবিএসের হিসাবে, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং শিল্প খাতে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। আর সেবার প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ হবে।

এদিকে জিডিপির তুলনায় বেসরকারি বিনিয়োগ আরও কমেছে। গত অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল। চলতি অর্থবছরে তা কমে ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে জিডিপির অনুপাতে সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। গত অর্থবছরে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।