বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরামর্শ দিয়েছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের পর্যায়ে যেতে হলে শক্তিশালী আর্থিক খাতের প্রয়োজন হবে। সে জন্য ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সুশাসন নিশ্চিতে জোর দিতে হবে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব শক্তি বাড়ানোর বিকল্প নেই।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এডিমন গিনটিং এই মন্তব্য করেছেন। সভায় এমসিসিআই সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন এডিবির কর্মকর্তা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান।
এডিমন গিনটিং বলেন, ‘দেশে ব্যবসার পুঁজি কম। পুঁজি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে ব্যাংক খাতের সুশাসনে উন্নতি করতে হবে। এটা অর্থনৈতিক সুশাসনের অন্যতম দিক। ব্যাংক খাত অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। ব্যাংক খাত ঠিক করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও সুশাসন বাড়াতে হবে। এটা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে কাজ করব। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে আমাদের এসব খাতে সুশাসনে জোর দিতেই হবে।’
এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের কাজের পরিধি বাড়াতে হবে। নিজ নিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিজস্ব স্বাস্থ্য ভালো রাখা জরুরি।
বৈশ্বিক চাপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপে আছে, এ কথা উল্লেখ করে এডিমন গিনটিং বলেন, এই সময়ে বাজার স্থিতিশীল রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সক্ষমতা আছে। নিশ্চয়ই সরকার এ নিয়ে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দৃঢ় পদক্ষেপ জরুরি। ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে এক নীতি নেওয়া হয়েছে। এরপরও মূল্যস্ফীতি উচ্চ রয়ে গেছে। ব্যাংক খাতের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে যেতে হবে। এর আগে আবার উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হবে।
এডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় গুণগত শিক্ষায় জোর দিতে হবে, যাতে দেশের কৃষি খাতে এই শিক্ষা অবদান রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত এগিয়ে আসতে পারে। দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফিলিপাইনের মতো নীতি গ্রহণ করতে পারে। বেসরকারি খাত বিনিয়োগ খুঁজছে। এ জন্য আমরা কাজ করছি। সামনে এডিবি বন্ড আসতে পারে। বিনিয়োগ বাড়াতে কার্যকর প্রতিযোগিতা আইন জরুরি। নিশ্চয়ই এই আইন পর্যালোচনা হবে।’
এডিমন গিনটিং বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নতুন করে অর্থায়নের সুযোগ খুঁজছি। এখন আমরা জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনীতি বৈচিত্র্যকরণ, পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধি, মানবসম্পদ ও সুশাসনের দিকে নজর দিচ্ছি। মানবসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে পারলে বাংলাদেশ আরও বেশি প্রবাসী আয় পাবে।’
অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার বলেন, এডিবি সব সময় কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। যেটা অন্যদের ক্ষেত্রে কম দেখা যায়।
পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বলেন, এডিবি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সহযোগী। পানিনিষ্কাশন কার্যক্রমে তারা বড় অর্থায়ন করেছে। দারিদ্র্য নিরসনে তাদের আরও কাজের সুযোগ আছে।
প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য আমরা অর্থায়ন খুঁজছি। এডিবি আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে।’
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থা অর্থায়নে পিছিয়ে গেলেও এডিবি কখনো এমনটা করেনি। সামনে নীতি ও আইনকানুন প্রয়োগ এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করতে পারে এডিবি।
সভাপতির বক্তব্যে এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, এডিবি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সহযোগী। সংস্থাটি ঋণের পাশাপাশি অনুদানও দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম। তিনিও বিভিন্ন খাতে এডিবির অর্থায়নের বিষয়টি তুলে ধরেন এবং আরও কিছু খাতে এডিবির অর্থায়ন হতে পারে বলে অভিমত দেন।