প্রথম আলো আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন নীতিনির্ধারক, ব্যাংকের পরিচালক, ব্যাংকার, বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম।
বাংলাদেশে ব্যাংক খাত খুবই নিয়ন্ত্রিত একটি খাত। আমরা সব সময় এ খাতে সুশাসনের কথা বলতেই থাকি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সুশাসন কীভাবে আসবে? যদি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভালো হয় আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ভালো না হয়, তাহলে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে যতগুলো ব্যাংক গড়ে উঠেছে, তত দক্ষ জনবল কি তৈরি হয়েছে? এই যে এতগুলো ব্যাংকে লুটপাট হয়ে গেল, সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা কী করেছেন? তাঁদের সততা কোথায় ছিল? আমার মনে হয়, ব্যাংক খাতে শীর্ষ পর্যায়ে সৎ ও দক্ষ লোকের অভাব তৈরি হয়েছে।
ব্যাংকের পাশাপাশি অনেকগুলো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অনেক এনবিএফআই এরই মধ্যে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কিছু এনবিএফআই ধ্বংসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর যুক্ত ছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে তিনি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক নীতি আছে, যেগুলো ব্যাংকের পাশাপাশি এনবিএফআইগুলোকেও মানতে হচ্ছে; কিন্তু সেটি হওয়া উচিত নয়। আবার এনবিএফআইয়ের করপোরেট করহার ও ব্যাংকের করহার একই। অথচ এনবিএফআইয়ের অর্থের উৎস খুবই সীমিত। আমাদের বেশি সুদে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়। আবার এনবিএফআই দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ বিতরণ করে থাকে। তাই ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের করহারে ব্যবধান থাকা উচিত।
বর্তমানে ব্যাংক খাত যে অবস্থায় আছে, তাতে কিছু ব্যাংকের জন্য লভ্যাংশ বিতরণ কয়েক বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া দরকার। যাতে লভ্যাংশ বিতরণ বন্ধ রেখে ব্যাংকগুলো নিজেদের আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরি হয়নি। যেভাবেই হোক দেশে একটি কার্যকরী সেকেন্ডারি মার্কেট গড়ে তুলতে হবে। শেয়ারবাজারে কোম্পানির ভ্যালুয়েশন বা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে।
এ ছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতেও বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। এই খাতের জন্য আলাদা কিছু নীতিও দরকার, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে।
হুমায়রা আজম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স