জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বড় আকারে কমায় জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ কমেছে ৬৪২ কোটি টাকা।
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি কমেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকে। পাশাপাশি রাষ্ট্র খাতের সোনালী ব্যাংক এবং বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এই তিন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। আরও ১২ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ১৫০ কোটি থেকে ৭০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
তবে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বড় আকারে কমায় আলোচ্য তিন মাসে ব্যাংক খাতে সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ কমেছে ৬৪২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি ৩৯ টাকা, যা সেপ্টেম্বর শেষে কমে হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এখন তা দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে। গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে।
গত জুন শেষে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ২৮ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমেছে ১১ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা।
একই সময়ে বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৩৬৬ কোটি থেকে কমে হয়েছে ১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৫৩৬ কোটি টাকা।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের একটি গ্রুপের ঋণ নিয়মিত হয়েছে। পাশাপাশি আরও কিছু গ্রাহকের ঋণ নিয়মিত হয়েছে। এ কারণে খেলাপি ঋণ কমেছে।
গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা।
ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেন বলেন, ‘খেলাপি ঋণের আগের তথ্যে কিছুটা ভুল ছিল। আবার নতুন করেও কিছু ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এই কারণে খেলাপি ঋণ এত বেড়েছে। তবে অক্টোবর-নভেম্বরে খেলাপি ঋণ কমেছে।’
আলোচ্য সময়ে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ৩৮১ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। আলোচিত হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির পর থেকে ব্যাংকটি ধুঁকছে। এখন বড় করপোরেটদের ঋণ দেওয়া বন্ধ রেখে ট্রেজারি ব্যবসা করে আয় করছে তারা।
একই সময়ে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৭ হাজার ৮৪ কোটি টাকায় উঠেছে। বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের কারণে গত ডিসেম্বর থেকে ব্যাংকটি তারল্যসংকটে ভুগছে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাহিদামতো অর্থ জমা রাখতে না পারায় জরিমানা গুনছে। এরপরও ঋণে অনিয়ম বন্ধ হয়নি, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ঋণ বিতরণ বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ব্যাংকটির তারল্যসংকট কাটাতে বিনা জামানতে টাকার জোগান দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসব নিয়ে সোনালী ও ইসলামী ব্যাংকের এমডিকে ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
আলোচ্য সময়ে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়ার খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা হয়েছে। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৫১৭ কোটি থেকে বেড়ে ২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকায় উঠেছে। এই সময়ে আইএফআইসি, অগ্রণী, ডাচ্–বাংলা, বাংলাদেশ কমার্স, ইউসিবি, ট্রাস্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, দি সিটি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫০-৩৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।