দেশে ব্যাংক একত্রীকরণের যে ধারা শুরু হয়েছে, তাতে সবশেষ নাম লিখিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের চারটি ব্যাংক। বিপর্যস্ত পদ্মা ব্যাংক বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার পর সরকারি ব্যাংকগুলো একীভূত হয়ে দুটি ব্যাংক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেল। তবে একীভূত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দুই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী হবে, তা নিয়ে ব্যাংকারদের মধ্যে আলোচনা আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক একত্রীকরণের যে নতুন নীতিমালা জারি করেছে, তাতে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, একত্রীকরণের পর যে ব্যাংক বিলীন হয়ে যাবে, সেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন বছরের আগে ছাঁটাই করা যাবে না। তবে ওই ব্যাংকের বড় কর্তারা থাকতে পারবেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, একত্রীকরণের পর হস্তান্তরকারী ব্যাংক/ফিন্যান্স কোম্পানির বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। তবে পাঁচ বছর পর হস্তান্তরকারী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ারধারীদের আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও উপযুক্ততা থাকা সাপেক্ষে পর্ষদে পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এ ছাড়া একত্রীকরণের সময় যাঁরা পরিচালক ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর পরিচালক হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বর্ণিত পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে তাঁদের ঋণ নিয়মিত থাকতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রকার পুনঃতফসিল/পুনর্গঠন ছাড়া তাঁদের ঋণ অবশ্যই নিয়মিত রাখার শর্ত পরিপালন করতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বিলুপ্ত ব্যাংক/ফিন্যান্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানির কোনো পদে রাখা যাবে না। একীভূত ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের কোনো কর্মকর্তাকে যদি উপযুক্ত মনে করে, তাহলে নতুন করে চুক্তি ভিত্তিতে উপযুক্ত কোনো পদে নিয়োগ দিতে পারবে। তবে হস্তান্তরকারী ব্যাংক/ফিন্যান্স কোম্পানি সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে সরকার তার অন্য ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সমপদে বহাল/বদলি করতে পারবে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানি হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানি বা ফিন্যান্স কোম্পানির বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন বছর পূর্তির আগে ছাঁটাই করা যাবে না। তবে তিন বছর পর পুনর্গঠিত বা হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানি উক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন করে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এ বিষয়ে নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পূর্বতন ব্যাংক-কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগ্যতা হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনীয় হলে সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমান বেতন ও সুবিধাদি নির্ধারণ করবে। তবে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সমমর্যাদা সম্পর্কে সন্দেহ বা দ্বিমত দেখা দিলে বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি নির্ধারণের তারিখ থেকে তিন মাসের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
এ ছাড়া একত্রীকরণের অনুমোদন হওয়ার পর হস্তান্তরকারী ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের কর্মকর্তা হতে না চাইলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ, পেনশন, গ্র্যাচুইটি, ভবিষ্য তহবিল ও অন্যান্য অবসরজনিত সুবিধা দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে গ্রহীতা ব্যাংক-নীতিমালায় এ বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া আছে।