জেপি মরগান, মরগান স্ট্যানলি, সিটিগ্রুপ, ওয়েলস ফার্গো—গত তিন মাসে এই কোম্পানিগুলোর মুনাফা অনেকটাই কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাত অস্থিতিশীলতার মুখে। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে ফেডারেল রিজার্ভ। ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়ে লাগাম টানছে ভোক্তা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সব মিলিয়ে আগামী বছর বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ অস্থিরতার মধ্যে বড় ধাক্কা খেয়েছে ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগ-ব্যাংকিং খাত। অর্থনৈতিক দুর্বলতায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৃহত্তম ব্যাংকগুলোর মুনাফায় পতন অব্যাহত আছে। খবর রয়টার্সের।
জেপি মরগান, মরগান স্ট্যানলি, সিটিগ্রুপ, ওয়েলস ফার্গো—গত তিন মাসে এই কোম্পানিগুলোর মুনাফা অনেকটাই কমেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে জেপি মরগানের প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমন বলেন, ‘আমরা এক অদ্ভুত পরিবেশে আছি। অথচ আমরা এ সময়ে ভালো কিছু আশা করেছিলাম। তবে আমরা সব সময় সতর্ক এবং যেকোনো বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে, যদিও সে কারণে অর্থনৈতিক মন্দা হতে পারে বলে শঙ্কা। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার শূন্যের কাছাকাছি ছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে ফেড, বর্তমানে যা ৩ থেকে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি আরও আগ্রাসীভাবে সুদহার বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান এই সুদহার ব্যাংকের মুনাফা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ও ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি ব্যাংক খাতের ভবিষ্যৎ মুনাফায় অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে। জেমি ডিমন আরও বলেন, ‘মার্কিন ভোক্তারা এখনো ভালো অবস্থায় আছেন। সে জন্য আমি মন্দার আশঙ্কা করছি না। তবে এ নিয়ে আমার মাথাব্যথা আছে। কারণ, মানুষের চলতি হিসাবে থাকা অর্থ সম্ভবত আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তাঁরা উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ বন্ধকি ঋণের সুদহারের মতো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।’
সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার আঘাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ব্যাংকগুলো আরও বেশি অর্থ আলাদা করে রাখছে। জেপি মরগান রিজার্ভের জন্য ৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং সিটি ৩৭ কোটি ডলারের সুরক্ষা তহবিল গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি ওয়েলস ফার্গো ঋণ ক্ষতির জন্য ৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার ভাতা বাড়িয়েছে।
এ খবরের পর জেপি মরগান ও ওয়েলস ফার্গোর শেয়ারদরে উল্লম্ফন দেখা গেছে। ব্যাংক দুটির শেয়ারদর যথাক্রমে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখান সিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।
জুলাই-সেপ্টেম্বরে জেপি মরগানের মুনাফা হয়েছে ৯৭৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। যদিও তাদের মুনাফা আরও হ্রাসের আশঙ্কা করা হয়েছিল। এ সময়ে ওয়েলস ফার্গোর মুনাফা ৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫৩ কোটি ডলার। ব্যাংকটির মুনাফায় বড় ধরনের পতন ঘটলেও তা প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া সিটির মুনাফা ২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি ডলার। সিটিগ্রুপের মুনাফাও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়েছে, যেখানে গত ৩ মাসে মরগান স্ট্যানলির মুনাফা ২৪৯ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, যদিও মুনাফার পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে করপোরেশনগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ (এমঅ্যান্ডএ) এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহ কমে গেছে। বিশেষ করে বিনিয়োগ ব্যাংকগুলো এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।