আইএমএফের ঋণ

তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার যুক্ত হয়েছে রিজার্ভে

বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার ছাড় করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এই অর্থ যুক্ত হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৫০ কোটি বা সাড়ে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। গত সোমবার বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির আওতায় তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেয় আইএমএফ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার আইএমএফের ঋণের কিস্তির অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হয়েছে। তাতে রিজার্ভের পরিমাণও বেড়েছে।

এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এখন তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের ফলে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের বাকি প্রায় ২৩৯ কোটি ডলার আর চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।

অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। বাংলাদেশের ঋণ আবেদনের ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি শর্তসাপেক্ষে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। আইএমএফ জানায়, শর্তপূরণ সাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ঋণের এ অর্থ দেওয়া হবে।

আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়ার চিঠিতে ২০২২ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এখন সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম)। তাই জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট-সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থের দরকার।

বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)—এই তিন আলাদা কর্মসূচির আওতায় ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এ জন্য সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৩৮টি শর্তও দিয়েছে। 

এবার ঋণছাড়ের অনুমোদনের সঙ্গে দেওয়া প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। বিশ্ববাজারে ধারাবাহিকভাবে পণ্যের উচ্চ মূল্য ও বৈশ্বিক আর্থিক খাতে অর্থপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট বেড়েছে। চলতি হিসাব সংকুচিত হলেও হঠাৎ আর্থিক হিসাবের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ও টাকায় চাপ পড়েছে। এই চাপ সামলাতে অবশ্য মুদ্রার বিনিময় হার সংশোধনে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আইএমএফ আরও বলেছে, আমদানি সংকোচন নীতির কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। পরের অর্থবছরে বিদেশি মুদ্রার সংকট কাটলে এবং আমদানি স্বাভাবিক হলে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে উঠতে পারে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ভাগে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ; সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও ঊর্ধ্বমুখী। চলতি বছরের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৭ শতাংশে ওঠে।

আইএমএফের পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। পরের অর্থবছরে তা কমে ৭ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। নীতিগত ধারাবাহিকতা ও বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে আসার সম্ভাবনার কারণে মূল্যস্ফীতি কমে আসতে পারে বলে মনে করছে আইএমএফ। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যেও অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা থাকবে; সেই সঙ্গে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকিও আছে।