তাৎক্ষণিক টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। কেনাকাটাসহ প্রয়োজনীয় নানান লেনদেন করা যাচ্ছে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে, সহজেই। একটা সময় অল্প কিছু টাকার জন্যও কাছের বন্ধু, সহকর্মী বা আত্মীয়স্বজনের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন টাকার প্রয়োজনে কারও কাছে না গেলেও চলে। ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংকের বুথ থেকে নগদ টাকা তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের কেনাকাটা ও সেবার মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে। আর কোনো সুদ ছাড়া টাকা পরিশোধে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় মিলছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব কার্ডস মো. আবু বকর সিদ্দীকের মতে, ক্রেডিট কার্ড জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। এখন আর প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। সবার জন্যই ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা দিচ্ছে এমটিবিসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ড নিতে পারছেন গ্রাহকেরা।
বিভিন্ন পেশার নারীদের কথা মাথার রেখে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেডিট কার্ড নিয়ে এসেছে। এ কার্ড দিয়ে নারীরা উন্নত পেমেন্ট সমাধান দিয়ে নারীদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পেমেন্ট ও শপিংয়ের অভিজ্ঞতাকেও উন্নত করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ কার্ডের সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাশব্যাক, ওয়েলকাম ভাউচার, রয়েছে নির্দিষ্ট পরিমাণে বার্ষিক ফি মওকুফের সুবিধা এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে বোনাস রিওয়ার্ড পয়েন্টস। বিভিন্ন হেলথ প্যাকেজের আকর্ষণীয় সুবিধাও রয়েছে। সপ্তাহের বিশেষ দিনে গ্রোসারি কেনাকাটায় বিশেষ ছাড়, রিওয়ার্ড পয়েন্টস নানা অফার ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। রয়েছে পারলারে লেনদেনসহ ভ্রমণের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের জন্যও বিশেষ সুবিধা। নারীদের বিশেষ ক্রেডিট কার্ডহোল্ডাররা বিউটি সেলুন, জুয়েলারি শপ, ই-কমার্স পোর্টাল, গ্রোসারি, পোশাকের দোকান ইত্যাদিতে এক্সক্লুসিভ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
মো. আবু বকর সিদ্দীক জানান, নারীদের জন্য ‘এমটিবি অঙ্গনা’ নামে কার্ড রয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের। এমটিবি অঙ্গনা ভিসা প্লাটিনাম ও সিগনেচার ক্রেডিট কার্ড। ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বাংলাদেশি যেকোনো নারী গ্রাহক এই কার্ডটি পেতে পারেন। আয় অনুযায়ী ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লিমিট দেওয়া হয় অঙ্গনা কার্ডটিতে।
ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সহজ করতে এফ-কমার্সভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া প্রিপেইড কার্ড চালু করেছে মাস্টারকার্ড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ই-কুরিয়ার। কার্ডটিতে দ্বৈত মুদ্রা (ডুয়েল কারেন্সি) সুবিধা থাকায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্য ছাড়াই নারী উদ্যোক্তারা অর্থের বিনিময়ে তাঁদের ফেসবুক পেজের প্রচার চালাতে পারবেন। বিভিন্ন ই-কমার্স পোর্টাল ও দোকান থেকে মূল্যছাড়ে পণ্য কেনার পাশাপাশি বিভিন্ন সুবিধাও পাওয়া যাবে কার্ডটিতে। শুধু তা-ই নয়, ই-কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য বাজারজাত করে সরাসরি নিজেদের অ্যাকাউন্টে অর্থ সংগ্রহ করা যাবে। ফলে পণ্য বিক্রির পর অর্থ সংগ্রহের জন্য কোথাও যেতে হবে না।
মো. আবু বকর সিদ্দীক বলেন, ‘বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। একই সঙ্গে তাঁরা দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন। নিজেদের উদ্যোগ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য বর্তমানে এফ-কমার্স সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া প্রিপেইড কার্ড নারীদের ব্যবসা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সোশ্যাল মিডিয়া কমার্স প্রিপেইড কার্ডটি নারীদের এফ-কমার্সভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা করবে।’
শুধু চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীরাই ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন—ধারণাটি ভুল। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী, তরুণ বা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা দিচ্ছে। ‘এমটিবি পেপ্লাস’ কার্ডটি দ্বৈত মুদ্রার প্রিপেইড কার্ড, যা বিশেষত শিক্ষার্থী বা তরুণেরা বা ফ্রিল্যান্সাররা বিশ্বব্যাপী এবং স্থানীয়ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। যেকোনো আর্থিক লেনদেনের অভিজ্ঞতাকে সহজ এবং আপনার জীবনযাত্রাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে এমটিবি পেপ্লাস বিশেষভাবে তৈরি একটি প্রিপেইড কার্ড। এমটিবির যেকোনো শাখা থেকে শিক্ষার্থী, তরুণ বা ফ্রিল্যান্সাররা পেপ্লাস কার্ডে তাঁদের প্রয়োজন বুঝে টাকা লোড করার সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। এই কার্ডটি পাওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সাধারণ কিছু কাগজপত্র লাগবে।
ছাড়া ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বয়স হতে হবে অন্তত এক বছর, যাতে অন্তত ১০ লাখ টাকার লেনদেন থাকতে হবে। তাহলে তারা ক্রেডিট কার্ড দিতে পারবন। চাকরিজীবীরা ছয় মাসের ব্যাংক হিসাব দেখাতে হবে। মাসিক বেতন হতে হবে ২৫ হাজার টাকার বেশি। চাকরির বয়সও ছয় মাসের কম হওয়া চলবে না।