ডলার সংকট না কমে আরও বেড়েছে। ফলে আমদানিকারকদের এখনো বেশি দামে ডলার কিনে আমদানি দায় শোধ করতে হচ্ছে।
ডলারের দামের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের সুফল মেলেনি। এতে ডলারের দাম না কমে বরং সরবরাহ কমেছে। ফলে সংকট আরও বেড়েছে। কারণ, মার্কিন ডলারের দাম আরও বাড়বে, এমন আশায় ব্যবসায়ীরা রপ্তানি আয় নগদায়ন না করে তা নিজেদের ব্যাংক হিসাবে ধরে রাখছেন। আবার রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় আসাও কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ব্যাংক আমদানি দায় পরিশোধের সময় পিছিয়ে দিচ্ছে।
বর্তমানে রপ্তানিকারকেরা রপ্তানি আয় ৩০ দিন পর্যন্ত নিজস্ব হিসাবে ধরে রাখতে পারেন। সংকটের পরিস্থিতিতে এক দিনের মধ্যে রপ্তানি আয় নগদায়নের নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ব্যবসায়ীদের চাপে তা বাড়িয়ে ৩০ দিন করা হয়।
ব্যাংকাররা বলছেন, যে সংকট হয়েছে, তা কাটতে সময় লাগবে। আর যে কৌশল ব্যবহার করে এখন বাজার স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা ব্যর্থ হলে আরও বড় সংকট হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাম ধরে রাখাকে দায়ী করছেন কেউ কেউ।
ব্যাংক রপ্তানি বিল ৯৯ টাকায় কিনে নিচ্ছে। আবার ঋণপত্রের দায় পরিশোধের সময় আমাদের ১০৪ টাকায় ডলার কিনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পোশাক খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। বেতনও দিতে পারবে না।মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
সংকট প্রকট হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) শীর্ষ নেতারা গত রোববার এক সভায় বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করেন। এতে রপ্তানি আয়ে সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা, প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা দাম বেঁধে দেওয়া হয়। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয়।
বাফেদার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ন্যাশনাল ব্যাংক ১১২ টাকা, সিটি ব্যাংক ১১০ টাকা, ইসলামী ব্যাংক ১০৯ টাকা ও পূবালী ব্যাংক ১০৮ টাকা দামে ডলার কিনেছে। আমদানিকারকদের এখনো বেশি দামে ডলার কিনে দায় শোধ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংকগুলোর ঘোষিত দাম অনুযায়ী, গতকাল আমদানি দায় নিষ্পত্তিতে প্রতি ডলারে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ১০৬ টাকা ৮০ পয়সা, জনতা ব্যাংক ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা, অগ্রণী ব্যাংক ১০৫ টাকা ১০ পয়সা; আর বেসরকারি প্রাইম ব্যাংক ১০১ টাক ৯২ পয়সা, ইস্টার্ন ব্যাংক ১০৩ টাকা, ডাচ্–বাংলা ১০৫ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ১০৪ টাকা ৮০ পয়সা ও সিটি ব্যাংক ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা নিয়েছে।
রপ্তানি আয় নগদায়নে ব্যাংকগুলো আগে প্রতি ডলারে ১০৪-১০৫ টাকা দিত। গত রোববার থেকে রপ্তানি আয় নগদায়নে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা। ফলে রপ্তানিকারকেরা এখনই ডলার নগদায়ন না করে নিজেদের হিসাবে জমা রাখছেন।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা ডলারের মূল্যবৃদ্ধির আশায় রপ্তানি আয় ধরে রাখছেন। ফলে ডলারের সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য সংকটও কাটছে না।
তবে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হয়তো ৫ শতাংশ ব্যবসায়ী ডলার নগদায়ন না করে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা আছে। অন্যদের অবস্থা খুবই খারাপ। ব্যাংক রপ্তানি বিল ৯৯ টাকায় কিনে নিচ্ছে।
আবার ঋণপত্রের দায় পরিশোধের সময় আমাদের ১০৪ টাকায় ডলার কিনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পোশাক খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। বেতনও দিতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে বড় বিপদ আসবে।’
এদিকে বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ডলার প্রবাসী আয়পেত। প্রবাসী আয়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৮ টাকা বেঁধে দেওয়ার পর এখন তা কমে ১০ লাখ ডলারে নেমেছে।
এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসীরা আগে আরও বেশি দাম পেতেন। এখন কম পাচ্ছেন। এ জন্য অনেকেই অন্য মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন। তবে কোনো কোনো এক্সচেঞ্জ হাউস দাম আরও বৃদ্ধির আশায় ডলার মজুতও করছে।