ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশি দামে ডলার কেনা থেকে বিরত থাকতে ব্যাংকটিকে মৌখিক পরামর্শ দিলেও সেই পরামর্শ শোনেনি ব্যাংকটি। তাই বেশি দামে ডলার কেনার কারণ জানতে চেয়ে ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত দেড় বছরে দেশি-বিদেশি একাধিক ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাস্তির মুখে পড়েছে। তবে এবারই প্রথম ইসলামী ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে এখন ঘোষিত দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু ব্যাংকটি প্রবাসী আয় কিনতে ঘোষিত দামের চেয়ে প্রতি ডলারে ১০ টাকা বেশি দিচ্ছে। প্রবাসীদের স্বজনেরা এই বাড়তি দাম পাচ্ছেন। ডলারের বাড়তি দামের পাশাপাশি মিলছে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও। প্রবাসীরা ইসলামী ব্যাংকের হিসাবে টাকা না পাঠালেও তা উচ্চ দামে কিনে নিচ্ছে ব্যাংকটি।
গ্রাহকসেবা ও বিস্তৃত নেটওয়ার্কের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটি প্রবাসী আয়ে শীর্ষস্থানে ছিল। এর ফলে ব্যাংকটি অন্য অনেক ব্যাংককে ডলারের জোগান দিত। বাংলাদেশ ব্যাংকও ইসলামী ব্যাংক থেকে ডলার কিনত। তবে মালিকানা পরিবর্তনের পর নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকটিতে সংকট দেখা দিলে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠানো কমিয়ে দেন প্রবাসীরা। তাতে প্রকৃত প্রবাসী আয় আসা কমলেও বেশি দামে ডলার কিনে ব্যাংকটি শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
বেশি দামে ডলার কেনার কারণ জানতে চেয়ে ব্যাংকটির এমডির কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের ব্যাংক কিছুদিন ধরে বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে বাফেদার ঘোষিত দরের চেয়ে উচ্চ দরে বৈদেশিক মুদ্রা কিনছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টেলিফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে আপনাদের ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং প্রধান ব্যবসায়িক কর্মকর্তার (সিবিও) পরামর্শে উচ্চ দরে এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা কেনা হয়েছে।
এ ধরনের বাজার শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রম হতে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে বিষয়টি জানানোর আশ্বাস দেন। তবে পরে ট্রেজারি প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এমনকি ঘোষিত দামের চেয়ে উচ্চ দামে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় অব্যাহত আছে।’
চিঠির বিষয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। এখন প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ও আমদানিকারকদের জন্য এ দাম ১১০ টাকা।
কিন্তু ইসলামী ব্যাংক এ দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনছে। তাই গত নভেম্বর ও চলতি ডিসেম্বরে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে বৈদেশিক মুদ্রা কেনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ব্যাংকটিকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।