বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরীর ব্যাংক লেনদেনের সব ধরনের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর ব্যাংক লেনদেনের তথ্যও চেয়েছে সংস্থাটি। আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি দুদক থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই তথ্য চাওয়া হয়। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এস কে সুর চৌধুরী বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হিসেবে কিছুদিন আগে অবসরে গেছেন।
দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। এই অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপপরিচালক মো. নাজমুল হুসাইন, সহকারী পরিচালক আফরোজা হক খান ও উপসহকারী পরিচালক সাবরিনা জামানের সমন্বয়ে ৩ সদস্যের অনুসন্ধানকারী টিম গঠন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযুক্তদের নামে ব্যাংকের কোনো শাখায় কোনো ধরনের ব্যাংক হিসাব, ঋণ হিসাব, এফডিআর বা সঞ্চয়পত্র আছে কি না, তা জানা প্রয়োজন (হিসাব খোলার ফরম, দাখিলকৃত রেকর্ডপত্র, কেওয়াইসি, নমিনি, টিপি, সিগনেচার কার্ড এবং হিসাব বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র)। পাশাপাশি তাঁদের কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর ব্যাংক লেনদেনের তথ্যও চেয়েছে সংস্থাটি।
চিঠিতে এস কে সুর চৌধুরীর ঠিকানা হিসেবে ফ্ল্যাট নম্বর ২/৬০২, ইস্টার্ন উলানিয়া, ২ সেগুনবাগিচা, ঢাকা ও ৩০/২ পশ্চিম রামপুরা ঢাকার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার দয়ারামপুর গ্রাম।
আর্থিক সংকটে পড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের ক্ষমতার উৎস ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। পি কে হালদার বিভিন্ন সময় আর্থিক সুবিধা ও মূল্যবান উপঢৌকন দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের ওই দুই কর্মকর্তাকে বশে রেখে দুর্নীতির মাধ্যমে অবাধে অর্থ লোপাট করেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্সসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে ও বেনামি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার। এ সময় তিনি ছিলেন আভিভা ফাইন্যান্স ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি। দুটোই এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। সবগুলো প্রতিষ্ঠানই এখন সংকটের মধ্যে আছে এবং অনেক গ্রাহক জমা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
এই ঘটনায় ২০২২ সালের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। তবে তাঁরা তখন অর্থ লোপাটে নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন।