বিদেশি অংশীদারি যৌথ মালিকানার কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনার জন্য নতুন নীতিমালা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নীতিমালায় ব্যবসা শুরু, ব্যাংকিং লেনদেন, আর্থিক বিবরণী, ব্যাংকঋণ, মুনাফা স্থানান্তর ও বিদেশি কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে আজ বুধবার এই নীতিমালা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, বিদেশি নাগরিক বা যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে নিবন্ধিত নয়, তাদের এ দেশে যৌথভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা কার্যালয় স্থাপন করতে চাইলে নীতিমালাটি মেনে চলতে হবে। বিদেশি অংশীদারের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বা সাবকন্ট্রাক্টিং করার ক্ষেত্রেও এই নীতিমালা মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশি অংশদারি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানিকে প্রথমেই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে ব্যবসার অনুমতিপত্র নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কার্যালয়ের অধীন অংশীদারদের মধ্যে একটি বৈধ চুক্তি থাকতে হবে। বিডার অনুমতি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগকে (এফইআইডি) জানতে হবে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিয়ম অনুযায়ী টিআইএন, বিআইএন, ভ্যাট ইত্যাদি সনদ নেবে। এ ছাড়া জমা দিতে হবে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন।
বিদেশি অংশীদারি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি নামে বাংলাদেশের যেকোনো তফসিল ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখায় ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে। এডি শাখা এ ধরনের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণে মনোনীত এডি হিসেবে গণ্য হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। এই হিসাবের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বহির্মুখী লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। বিদেশে পাঠানো ও বিদেশ থেকে আসা সব ধরনের অর্থের লেনদেন তদারকি এবং মনোনীত এডির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিবেদন করার ব্যবস্থা থাকবে।
অবশ্য এডি শাখার বাইরেও দেশি মুদ্রায় লেনদেনের জন্য এক বা একাধিক ব্যাংকে এক বা একাধিক ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে বিদেশি অংশদারি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি। সে ক্ষেত্রে মনোনীত এডির অনাপত্তিপত্র দিতে হবে। কার্যাদেশের বিপরীতে পাওয়া সব অর্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মূল ব্যাংক হিসাবে জমা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এফইআইডির অনুমতি সাপেক্ষে দেশের বাইরেও ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএফআরএ) ও বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিদেশি অংশদারি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে। এতে দেশের ভেতরে বা বাইরে থেকে আয় দেখাতে হবে। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এফইআইডি থেকে অনুমিত নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে মুনাফা নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমিত লাগবে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির পক্ষে এডি শাখা প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ এফইআইডিতে আবেদন করবে। যন্ত্রপাতি আমদানিতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পরিশোধ না করা হলেও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র এডি শাখায় জমা দিতে হবে। বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেবে বিডা বা অন্য কোনো দপ্তর। তবে এডি ব্যাংক সেগুলো যাচাই–বাছাই করবে। বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা বাবদ পরিশোধ করা অর্থ আর্থিক বিবরণীতে প্রকাশ করতে হবে।