অভিমত

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিই রিজার্ভকে সংকটে ফেলেছে

নিউইয়র্কে বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স মেলায় সবাই একটি বিষয়ে অভিন্ন কথা বলেছেন। বাফেদা ডলারের অন্যায্য দর নির্ধারণ করায় প্রবাসী আয় কমেছে। এতে দেশে ডলার–সংকট বাড়ছে। গত এক বছরে টাকার মান কমেছে ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারকে বাজারের হাতে ছেড়ে না দিলে ডলার–সংকট আরও বাড়বে। বাড়তে থাকবে রিজার্ভের সংকটও।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মিডটাউন হিলটনে ২২ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হয়ে গেল বাংলাদেশে বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স মেলা। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের মালিক বিশ্বজিৎ সাহার আমন্ত্রণে সেখানে যাই। আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন আহমেদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা মেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

আগেই জেনেছিলাম, মেলায় অতিথি হিসেবে আসছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ার। সঙ্গে অন্যান্য ব্যাংকের এমডি, ডিএমডিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা থাকছেন।

যথারীতি তাঁরা মেলায় অংশ নিয়েছেন। সবশেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সমাপনী অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে উপসংহার টেনেছেন।

ডলারের ন্যায্য দাম

রেমিট্যান্সের (প্রবাসী আয়) অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, যা প্রায় সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বর্তমান সময়ের বিচারে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় আসা উচিত। বছরখানেক আগেও কোনো কোনো মাসে ২০০ কোটি ডলারের ওপরে রেমিট্যান্স এসেছে। কিন্তু গত কয়েক মাসের প্রবণতা নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছে, এভাবে রক্তহীন হতে থাকলে রেমিট্যান্সের রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব নয়। রিজার্ভ–সংকট রক্তস্বল্পতার মতো দিনে দিনে নাজুক হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একটি বিষয়ে কারও মধ্যে দ্বিমত পাইনি। তা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ডলারের অন্যায্য দাম নির্ধারণ। বাফেদার দামে তখন এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো দিচ্ছিল ডলারে ১১০ টাকা। মেলার অনুষ্ঠানে একজন বক্তা বললেন, এখন ১২২ টাকায়ও ডলার মিলছে না। সরকারের আড়াই ভাগ ‘অপচয়’–এর সঙ্গে যুক্ত করলেও দেশে মুদ্রা পাঠানো প্রবাসীরা প্রতি ডলারে প্রায় ১০ টাকা কম পাচ্ছেন।

অথচ দেশি–বিদেশি কিছু অ্যাপস মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। তাদের দামও বাংলাদেশ ব্যাংকের দামের চেয়ে নিদেনপক্ষে পাঁচ টাকা বেশি। দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীরা কি পাপ করেছেন যে তাঁর এক হাজার ডলার পাঠিয়ে ১০ হাজার টাকা লোকসান দেবেন? ডিব্বা মিয়া বিদেশে কষ্টার্জিত ডলার দেশে পাঠান। তাঁর স্ত্রী ফুলু বেগমের কী দায় ঠেকেছে যে তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বিজ্ঞোচিত’ বিকৃত বিনিময় হার মেনে ১০ হাজার টাকা লোকসান দিতে হবে। বিদেশ হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভোক্তারা মামলা করে দিত এবং সেই মামলায় জিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করত।

কোনটি বৈধ, কোনটি অবৈধ

বাংলাদেশ যদি লাখ লাখ রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীর ডলারের ন্যায্য দাম দিতে না পারে—সেটা তাদের ব্যর্থতা। তাদের ভুল দামকে ‘বৈধ’ তকমা দিয়ে প্রবাসীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তাঁদের পরিবারকে আর্থিকভাবে বঞ্চিত করা রীতিমতো অন্যায়। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা যদি অপেক্ষাকৃত ন্যায্য দাম দিয়ে লাখ লাখ পরিবারের ক্ষতির বোঝা কমায়—তাহলে হুন্ডিকে ‘অবৈধ’ তকমা দিয়ে তাঁদের পেছনে লাগা আরেক ধরনের অন্যায়। এ জন্যই অর্থনীতিবিদেরা কালোবাজারিদের পেছনে পুলিশ দাবড়িয়ে অর্থ ব্যয় করার আগে সরকারকে ডলারের সঠিক মূল্য নির্ধারণে যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই উপদেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল চিন্তক প্রতিষ্ঠান আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (এইআই) এ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছে। এইআই শুদ্ধধারার স্মিথিয়ান অর্থনীতি অনুসরণ করে থাকে, যেখানে চাহিদা ও জোগানের মিথস্ক্রিয়া মুদ্রা বা দ্রব্যের সঠিক বাজার দাম নির্ধারণ করে। তখন এ দামেই বাজার পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াকার বুশের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গ্রেগরি ম্যাংকিউ এ নিয়ে পাঠ্যপুস্তকেও বিশদ আলোচনা সংযোজন করেছেন, যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা টিকিট কালোবাজারিদের বিভ্রান্ত চোখে বিচার না করে।

এইআইয়ের অর্থনীতিবিদ মার্ক পেরিও সতর্ক করে দিয়েছেন, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে উচ্চ মূল্যে থিয়েটারের টিকিট বিক্রি অন্যায় নয়। অন্যায় তার, যে শুরুতেই ভুল দাম ঘোষণা করেছে। অথচ চাহিদা ও জোগানের বিষয়টি বিচারে আনেনি।

দারোগাগিরির উত্থান

বাংলাদেশ ব্যাংক হারিকেন দিয়ে মানি চেঞ্জার ও হুন্ডিওয়ালা খুঁজে বেড়াচ্ছে। এতে অন্যায় হচ্ছে তিন জায়গায়—১. বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বাজার দাম দেওয়ার শপথ অনুযায়ী কাজ করছে না, যা নীতি কপটতা ২. বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসীদের পরিবারকে ন্যায্য উপার্জন থেকে বঞ্চিত করছে এবং ৩. যারা কিছুটা ন্যায্য দাম দিচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পেছনে লাগতে গিয়ে অযথা শক্তিক্ষয় করছে। চোরাই পথে ডলারের ব্যবসাকে আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে। এতে জ্ঞানভিত্তিক নীতি নির্ধারণ হচ্ছে উপেক্ষিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্বের মান বিশ্ব স্বীকৃতিতে কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমূর্তি যেন দুদক বা কোতোয়ালি থানার সঙ্গে মিশে না যায়।

সেমিনারের বক্তারা কে কী বলেছেন, তা আলাদা করে উল্লেখ করলাম না। কারণ, বক্তাদের অধিকাংশই দেশের ব্যাংকিং খাতে এখনো কর্মরত। কার কোন কথায় বাংলাদেশ ব্যাংক কাকে কখন জরিমানা করে বসে, বলা কঠিন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাসে নিয়ন্ত্রণ কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে ‘দারোগাগিরি’র উত্থান ঘটেছে, তার নজির অতীতের কোনো গভর্নরের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না।

এর ফল ভালো হলে বিজ্ঞ মানুষের সমর্থন মিলত। দুই বছর ধরে অবস্থা তো খারাপের দিকেই যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়নের নিচে। গত দুই বছরে এই রিজার্ভ চল্লিশোর্ধ্ব বিলিয়নের ঘর থেকে নামতে নামতে এখানে ঠেকেছে। ‘দিনে দিনে খসিয়া পড়িছে রঙ্গিলা দালানের মাটি…।’ এই রিজার্ভ এখন যে আর স্বস্তির পর্যায়ে নেই, তা বুঝতে হলে নবম শ্রেণির ঐকিক নিয়মের অঙ্কই যথেষ্ট।

অর্থনীতিবিদদের দাওয়াত

বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকটা দায়মুক্তির অসিলায় আজকাল অর্থনীতিবিদদের ডাকছে। কথা শুনছে। কাজের কাজ কিছুই করছে না। অর্থাৎ ডলারের দামটাই ঠিক করছে না। পরিস্থিতি আরও শোচনীয় করছে। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ খেলাপি ঋণ ও ব্যর্থ রাজস্ব খাতের ঘাটতি মেটাতে টাকা ছাপাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে জীবনে এই প্রথম বারণ করলেন না। আগে বহুবার বলেছেন।

আতিউর রহমান বাইরের ফোরামে যা–ই বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককেও একই উপদেশ দিয়েছেন। আহসান এইচ মনসুর ও সাদিক আহমেদ যে কথা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে বললেন, সেসব কথা তাঁরা এবং আরও অর্থনীতিবিদেরা দুই বছর ধরে বলে যাচ্ছেন। লাইব্রেরিতে গিয়ে পত্রিকা ঘাঁটলেই তো দেখা যায় কে কী বলেছেন। এতে বাংলাদেশ বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেছে কি?

কাঙালের কথা বাসি হলে ফলে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের চাপে পড়ে কথা শুনেছে। এই তো সেদিন আরেক চাপ খেয়ে রেপো রেট বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। এগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চরম মনস্তাত্ত্বিক দীনতা প্রমাণ করে, যা দেশের ভাবমূর্তির জন্য ভালো নয়।

লালন ও রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ

দার্শনিক লালন ও রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে এই সময় তাঁদের বাংলাদেশ ব্যাংকে পরামর্শদানের জন্য ডাকা সমীচীন হতো। লালন এসে শুধু বলতেন, ‘সময় গেলে সাধন হবে না।’ সময় শেষ হয়ে আসছে। শুধু নির্বাচনের পর সব ঠিক হয়ে যাবে, এমন ভাবনা ভয়ংকরভাবে বিপজ্জনক। রবীন্দ্রনাথ এসে শুধু তাঁর ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতাটি আবার পাঠ করতেন। এর শিক্ষা হচ্ছে—দুনিয়ার ধূলি বিতাড়নের পেছনে শক্তিক্ষয় অর্থহীন। বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে নিজের চরণযুগল পাদুকা দিয়ে ঢেকে রাখা।

একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজও একটি। নিজের বিনিময় হার অর্থাৎ ডলারের সঠিক দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে স্বাধীনতা দেওয়া, যাতে তারা ব্যবসা বুঝে নিজেদের মতো ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারে। আর কোনো তেলেসমাতিতে বা বুড়ো দাদুর মতো বাফেদাকে দিয়ে টিপে টিপে ডলারের দাম ঠিক করলে রোগমুক্তি সম্ভব নয়। আমাশয় এখন ‘ক্রনিক’ হয়ে রক্ত আমাশয়ে পরিণত হয়েছে। দেশের বিপদমুক্তির স্বার্থে হয় ওষুধ বদলাতে হবে। চিকিৎসক ওষুধ না বদলালে চিকিৎসকই বদলাতে হবে।

দাদুর খড়ম–যাত্রা

সম্প্রতি ব্যাংকের এমডিদের ডলারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে গভর্নর সাফ ‘না’ বলে দিয়েছেন। এটা তো এমডিদের রেশন ভিক্ষা নয়। তাঁরা মাঠের খবর রাখেন। বাজারের আসল উত্তাপ তাঁরা অনুভব করেন। তাঁদের সামাল দিতে হয় চার চাহিদাকে—১. বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ২. পরিচালকদের মুনাফার চাপ ৩. ঋণখেলাপিদের ছলচাতুরী ও রাজনৈতিক চাপ এবং ৪. আমদানি ও রপ্তানিকারকদের চাওয়া–পাওয়া। তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জবাবদিহি অনেক কম। ব্যাংকারদের এই পরিব্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ কাজে লাগালে আজ এই দুরবস্থায় পড়তে হতো না।

নিউইয়র্কের রেমিট্যান্স মেলায় এসেও অনেক ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যে এই চাপা ক্ষোভ লক্ষ করলাম। মানি চেঞ্জার ও অ্যাপসভিত্তিক রেমিট্যান্স কোম্পানিগুলোর মধ্যেও ডলারের অন্যায্য দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রবল। কারও নাম উল্লেখ করে তাঁদের পেটের ভাত কেড়ে নিতে চাই না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি নির্ধারণ স্ববিরোধী ও নিম্নমানের। ইতিমধ্যে এর নানামুখী স্বীকৃতি আসতে শুরু করেছে। এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। গত দুই বছরে ভারত ও শ্রীলঙ্কার ডলার মূল্যের চিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চিত্র উদ্ভটভাবে আলাদা। ওদের চিত্রে আছে অস্থিরতা, আছে উত্থান-পতন এবং এটিই অর্থনীতির স্বাভাবিক মডেল।

রুডিগার ডর্নবুশ তাঁর ‘ওভারশুটিং এক্সচেঞ্জ রেট মডেল’-এ দেখিয়েছেন, একটা আটকানো অবস্থা থেকে বিনিময় হারকে মুক্ত করলে তা প্রথমে ‘ওভারশুটিং’-এর কবলে পড়, যা খুব স্বাভাবিক। ক্রমে এই পাগলামো কমে আসে এবং বাজার আস্তে আস্তে স্থিতিশীল হয়। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মডেলে তা ধরা পড়ে। ভারত গত এক বছরে রুপির মান পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে।

শ্রীলঙ্কা রুপির মান বাড়াতে সক্ষম হয়েছে ১৩ ভাগ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার দাম হারিয়েছে ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে ডলারের দাম দেখলে মনে হয়, বুড়ো দাদুর খড়ম–যাত্রা। টিপে টিপে উঠছে এবং সর্বদাই নাতির পেছনে পড়ে আছে। এটি বিজ্ঞতার লক্ষণ নয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব।

ডলারের দাম ও মধ্যমূল্য মডেল

কীভাবে হুইস্কির দাম নির্ধারিত হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্রাবস্থায় একদা ক্লাসে শিখলাম তার গাণিতিক মডেল। বড় লজ্জা লাগছিল। আজ সে লজ্জা কেটে গেছে। ওক কাঠের পিপায় হুইস্কি যত দিন ধরে রাখা যাবে, ততই তার খানদানিত্ব ও দাম বাড়বে। দেশে ডলারের অবস্থাও তাই।

এতে দুই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে—১. বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দাম সব সময়ই বাজারদরের পেছনে পড়ে আছে, যা হুন্ডি ব্যবসাকে দান করছে মৃতসঞ্জীবনী সুধা ২. যেহেতু ডলারের দাম বাড়তেই থাকবে, সেহেতু ডলার ধরে রাখলেই মুনাফা! এটি ডলারের আন্তবালিশ ব্যক্তিগত মজুত আরও বাড়াবে। এতে বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিঞ্চিৎ গর্দভ প্রকৃতির মানুষও বালিশের নিচে ডলার রেখে শুয়ে থাকবে আর মুনাফা বাড়াবে।

এসব কাণ্ডকারখানা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি নির্ধারণের ‘স্মার্টনেস’ কতটুকু পশ্চাৎপদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাদুগতি এভাবে ডলার–সংকটকে কৃত্রিমভাবে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং রিজার্ভ–সংকটকে জাতির সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যায় পরিণত করছে।

  • বিরূপাক্ষ পাল অর্থনীতির অধ্যাপক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র