টাকা-রুবল ও রুপির লেনদেন কবে

মার্কিন ডলারের ওপর অতিনির্ভরতা কমাতে সোয়াপ ব্যবস্থার মাধ্যমে রুবল ও রুপির সঙ্গে টাকার লেনদেন চালু নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।

ডলার–সংকটের পরিস্থিতিতে এখন বিকল্প মুদ্রায় লেনদেনব্যবস্থা চালুর বিষয়টি সামনে আসছে। বড় আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে টাকা-রুবলের লেনদেন নিয়ে। এদিকে ভারতও নতুন করে রুপিতে লেনদেনের প্রস্তাব দিয়েছে। ২০১৩ সালে যখন ডলারের বিপরীতে রুপি টালমাটাল হয়েছিল, তখনো রুপি-টাকা লেনদেনের আলোচনা হয়েছিল। এ ছাড়া চীনা মুদ্রা ইউয়ানের সঙ্গেও টাকার লেনদেন চালুর দাবিও আছে।

সোয়াপ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই লেনদেন চালুর আলোচনা চলছে। এটি চালু হলে বাংলাদেশের কোনো রপ্তানিকারক রাশিয়ায় পণ্য রপ্তানি করলে ওই রপ্তানিমূল্য বাংলাদেশ ব্যাংক টাকায় পরিশোধ করবে।

ওই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাওনা থাকবে। একইভাবে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ কোনো পণ্য আমদানি করলে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থানীয় মুদ্রায় নিজ দেশের রপ্তানিকারককে তার পণ্যের রপ্তানিমূল্য পরিশোধ করবে।

‘ডলারের বাইরে অন্য যেকোনো মুদ্রার সঙ্গে আমরা লেনদেন শুরু করতে পারি। এর প্রস্তুতি হিসেবে এখনই পেশাদার মুদ্রা লেনদেনকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হতে পারে। কারণ, বিশ্বে কখন কী ঘটে যায় তা বলা সম্ভব না। তাই বিকল্প লেনদেনমাধ্যম থাকলে সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে এখন রাশিয়ার পরিবর্তে চীনের সঙ্গে এমন লেনদেন শুরু হতে পারে। কারণ, চীনের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এতে ব্যাংকগুলোও আগ্রহ দেখাবে।’
আনিস এ খান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান

তিন মাস পরপর দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ রকম দেনা–পাওনার হিসাব সমন্বয় করবে। এভাবে টাকা-রুবল দায় সমন্বয় হবে। যে দায় অসমন্বিত থাকবে, তা পরিশোধ হবে ডলার বা অন্য মুদ্রায়। একইভাবে অন্য দেশের সঙ্গেও লেনদেন করা যাবে। তবে এমন ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকলে ভূরাজনৈতিক ও বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলো বাংলাদেশকে কীভাবে নেবে, তা–ও দেখার বিষয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।

এ সম্পর্কে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলারের বাইরে অন্য যেকোনো মুদ্রার সঙ্গে আমরা লেনদেন শুরু করতে পারি। এর প্রস্তুতি হিসেবে এখনই পেশাদার মুদ্রা লেনদেনকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হতে পারে।

কারণ, বিশ্বে কখন কী ঘটে যায় তা বলা সম্ভব না। তাই বিকল্প লেনদেনমাধ্যম থাকলে সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে এখন রাশিয়ার পরিবর্তে চীনের সঙ্গে এমন লেনদেন শুরু হতে পারে। কারণ, চীনের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এতে ব্যাংকগুলোও আগ্রহ দেখাবে।’

জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে রাশিয়া সফরে গেলে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এরপর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ শুরু করে। টাকা-রুবল লেনদেনব্যবস্থা চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ওই বছরেই রাশিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে একাধিক সভা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ‘ট্রেড পেমেন্ট সেটেলমেন্ট মডেল’ প্রস্তাব করে।

অন্যদিকে ২০১৯ সালের নভেম্বরে রাশিয়া ফাইন্যান্সিয়াল ম্যাসেজিং সিস্টেম নেটওয়ার্কে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। তবে দেশের ব্যাংকগুলো ওই সময়ে এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে অনাগ্রহ দেখায়।

কারণ, ব্যাংকগুলোর বড় লেনদেন আমেরিকার ব্যাংকের সঙ্গে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সোয়াপ সিস্টেমে লেনদেন চালুর প্রস্তাব করে। এরপর বিষয়টি আর এগোয়নি।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কম হয়, তাহলে এমন লেনদেনব্যবস্থা চালু করলে তা টেকসই হয়। এতে দুই দেশই সমানভাবে উপকৃত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে চীন, রাশিয়া ও ভারতের বাণিজ্যঘাটতি বড় অঙ্কের। আবার রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধীরে চলো নীতিতে আছে।