প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামি সেবার বাজার বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ, ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ অনিয়মে অনেকে ইসলামি ধারার ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধারের জন্য ছুটছে। পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংক থেকেও টাকা ধার চাচ্ছে। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর এ সংকটকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো।
এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমানত বাড়াতে এরই মধ্যে পূবালী ব্যাংক তাদের সব শাখা ও উপশাখায় ইসলামি ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। ব্যাংকটি এরই মধ্যে ইসলামি ব্যাংকিং সেবার আওতায় প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আমানতও পেয়েছে। আর ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসলামি ধারায় আমরা আগামী দু-তিন মাসে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এ জন্য সব শাখায় এই সেবা চালু করা হয়েছে।’
আবার বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক গত ডিসেম্বরে চালু করেছে সিটি ইসলামিক নামে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা। ব্যাংকটির সব শাখায় মিলছে এ সেবা। ইতিমধ্যে ব্যাংকটির এই সেবার আওতায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আমানত পেয়েছে।
একইভাবে ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এবি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও এনআরবি ব্যাংক সব শাখায় প্রচলিত সেবার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে আরও ১৪ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় রয়েছে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা।
এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত দুই সপ্তাহে এসব ব্যাংকে অনেক গ্রাহক নতুন হিসাব খুলতে আসছেন। আবার অনেকেই অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ স্থানান্তর করতে চাইছেন। ফলে সামনে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবসা বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
দেশের ৬১ ব্যাংকের মধ্যে এখন ১০টি ইসলামি ধারার ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির আমানত প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এ ধারার অন্য ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ইসলামী ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এর মধ্যে ছয়টি ইসলামি ধারার ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে একই গ্রুপের হাতে।
এত দিন ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে চলত অন্য ইসলামি ব্যাংকগুলো। কিন্তু ঋণ অনিয়মের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংক সংকটে পড়ায় ইসলামি ধারার অন্য ব্যাংকগুলোতেও হঠাৎ করে তারল্য–সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর তারল্য সরবরাহ দিতে গত সোমবার তারল্য সহায়তা সুবিধা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুবিধা চালুর পর গত দুই দিনে (মঙ্গল ও বুধবার) ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ধার করেছে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো। বেশির ভাগ টাকা ধার করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।