রাজধানীর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জান্নাতুল তামান্না। মাস শেষ হতে না হতেই শেষ হয়ে যায় হাতের টাকা। তখন তাঁর একমাত্র ভরসা ক্রেডিট কার্ড। প্রয়োজনীয় সব উপকরণ কিনে পরের মাসে বেতন পাওয়ার পর পরিশোধ করেন। ক্রেডিট কার্ডের সুবিধার কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নানা কারণে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই আমি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি।
তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করে দিই। এতে অতিরিক্ত সুদ গুনতে হয় না আমাকে।’
জান্নাতুল তামান্না আরও বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমাকে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।’
বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড বিলাসবহুল কোনো বিষয় নয়, প্রয়োজনীয় একটি অনুষঙ্গ। ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে আমাদের জীবনযাত্রা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একসঙ্গে অনেকগুলো টাকা খরচের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করে ক্রেডিট কার্ড। গরমের কারণে অনেক দিন থেকেই শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) কেনার কথা ভাবছিলেন ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ। গত মাসে কয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকানও ঘুরেছেন।
কিন্তু দাম দেখে চিন্তায় পড়ে যান। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। একসঙ্গে এতগুলো টাকা ম্যানেজ করা তাঁর পক্ষে একটু কঠিন। এসি কেনার সহজ একটি সমাধান দিলেন তাঁর এক ব্যাংকার বন্ধু। ১২ মাসের ইএমআই সুবিধায় পছন্দের একটি এসি কিনে ফেলেন তিনি।
ফারুক আহমেদ বললেন, ‘আমার মতো মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ক্রেডিট কার্ড সত্যিই আশীর্বাদ। ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি-সুবিধার সেবাটি না থাকলে নগদ টাকায় প্রয়োজনীয় অনেক কিছু কেনা সম্ভব হতো না। তবে ক্রেডিট কার্ডে খরচ ও অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হয়। না হলে চড়া সুদে ঋণ শোধ করতে করতে বছর চলে যাবে।’
বিভিন্ন ধরনের কার্ড রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পারচেজ কার্ড, মানি ট্রান্সফার কার্ড, রিওয়ার্ডস ক্রেডিট কার্ড, ক্রেডিট বিল্ডার কার্ড, ওভারসিস কার্ড রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের প্রচলন বেশি। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে মোটামুটি সব ধরনের পেমেন্ট দেওয়া যায়। আর এই পেমেন্টটা দেওয়া হয় ব্যাংকের ফান্ড থেকে, যা গ্রাহক মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের কাছ থেকে ধার হিসেবে পেয়ে থাকেন। তবে এই ধারটা গ্রাহককে আবার সময়মতো শোধ করতে হবে।
হুট করেই কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা। দুজন মিলে ভালো কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেন। পকেট গড়ের মাঠ। উপায় কী? এমন সময় আপনাকে চিন্তাহীন রাখবে ক্রেডিট কার্ড। এ ছাড়া অনেকেই এখন নগদ টাকা বহন করার ঝামেলায় যেতে চায় না। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হয় না।
বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারেন। কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমার মধ্যে ব্যাংকে টাকা জমা দিলে জরিমানা গুনতে হবে না।
ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ।
বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।