‘কঠোর ব্যবস্থার’ ভয়ে প্রায় বন্ধ মানি চেঞ্জারে ডলার কেনাবেচা

  • ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের জন্য প্রতি ডলারের নির্ধারিত দাম ১১৩ টাকা।

  •  খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১১৭-১১৮ টাকায় দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

মার্কিন ডলার

আবারও হঠাৎ করে নগদ ডলারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে ডলার কেনাবেচার ওপর নজরদারি জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করায় বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে সাত মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। আরও ১০ মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। দাম বাড়ায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে মানি চেঞ্জারগুলোয় ডলার কেনাবেচা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

ব্যাংকগুলোতেও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ডলার মিলছে না। এই সুযোগে খোলাবাজারে প্রতি ডলার এখন ১১৭-১১৮ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। অথচ ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের জন্য প্রতি ডলারের নির্ধারিত দাম ১১৩ টাকার মধ্যে।

দাম নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির কারণে ডলার কেনাবেচা অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১১৭-১১৮ টাকা দিয়ে কিনতে হয়।

গতকাল শনিবার ক্রেতা সেজে রাজধানীর গুলশান-১ ও ২ নম্বরের সাতটি মানি চেঞ্জারে গিয়ে দেখা যায়, ডলার কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। মানি চেঞ্জাররা জানান, বিভিন্ন সংস্থার লোকজন নজরদারি করছেন। তাঁরা ক্রেতা সেজেও আসছেন। নির্ধারিত দামে ডলার বিক্রি না করলেই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যে দাম নির্ধারিত, সেই দামে কোথাও ডলার মিলছে না। এ জন্য তাঁরা ব্যবসা বন্ধ করে বসে আছেন। মানি চেঞ্জারদের আশা, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ব্যাংকগুলো তাদের নির্ধারিত দামে নগদ ডলার দেবে। তাহলে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে।

বিভিন্ন ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ডলার কেনার ব্যাপক চাহিদা ছিল। এ সময়ে অনেকেই বিদেশে ঘুরতে গেছেন। আবার শিক্ষার উদ্দেশ্যেও অনেকে বিদেশে গেছেন। তাঁদের প্রায় সবাই নগদ ডলার সঙ্গে করে নিয়েছেন। এতে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। ফলে খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম বেড়ে ১১৭-১১৮ টাকায় উঠেছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী, নগদে প্রতি ডলারের দাম ১১৩ টাকার মধ্যে থাকার কথা।

গুলশান-২ নম্বরের ট্রাস্ট মানি চেঞ্জারের বিক্রয়কর্মী মো. দিদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্রির জন্য ডলারের যে দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেই দামে ডলার কিনতেও পাওয়া যায় না। এ জন্য ডলার বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক আমাদের নির্ধারিত দামে ডলার দিলে আমরা ১১২ টাকায় বিক্রি করতে পারব। কিন্তু কেউ কমে ডলার দিচ্ছে না।’

মো. দিদার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামে ডলার কেনাবেচা করলে প্রতি ডলারে দেড় টাকা মুনাফা হয়। প্রতিদিন পাঁচ হাজার ডলার বিক্রি করলেই আমাদের ভালো ব্যবসা হয়। কিন্তু নির্ধারিত দামে ডলার না পাওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না।’

একই তথ্য জানান গুলশান-২ নম্বরের স্ট্যান্ডার্ড ফরেন এক্সচেঞ্জের কর্মীরা। গুলশান-১ নম্বর এলাকার একাধিক মানি চেঞ্জারে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে।  

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানির জন্য যে ডলার প্রয়োজন, বাংলাদেশ ব্যাংক তা তদারকি করে থাকে। নগদ ডলার হাতে হাতে দেশে আসে, আবার হাতে হাতে বিদেশে যায়। এটা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। তবে ব্যাংকগুলোর কাছে এখনো নগদ ডলারের ভালো মজুত আছে। আগের চেয়ে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। তাতে দাম এত বাড়ার কোনো কারণ নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার মজুত আছে, যা জুনে ছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ। গত বছর ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের মজুত ৯০ লাখ ডলারে নেমে এসেছিল। তখন প্রতি ডলারের দাম উঠেছিল ১২২ টাকা।

সমাধান কার্ডে

নগদ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদেশে খরচের জন্য কার্ড ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন ব্যাংকাররা। তাঁরা বলছেন, এখন ডেবিট ও ক্রেডিট, উভয় ধরনের কার্ড বিদেশে ব্যবহার করা যায়। এতে প্রতি ডলারের খরচও কম পড়ে। কার্ডে খরচে প্রতি ডলারে ১১১ টাকা ৫০ পয়সা, যেখানে ব্যাংকেই প্রতি ডলার ১১২ টাকা। আর খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১১৭-১১৮ টাকা।

জানা যায়, ইস্টার্ণ, দি সিটি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ্‌-বাংলাসহ কয়েকটি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ডেবিট কার্ড সেবা রয়েছে। এসব কার্ড ব্যবহার করে সহজেই বিদেশে খরচ করা যায়। তবে বিদেশে যাওয়ার আগে ব্যাংককে অবহিত করে সুবিধাটি চালু করে নিতে হয়।  

ডলারের এক দাম কার্যকর আজ  

এদিকে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে সব ক্ষেত্রে ডলার কেনার দাম হবে এক, পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে ডলার বেচার দামও হবে এক। রোববার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পণ্য বা সেবা রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কেনায় ডলারের দাম হবে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি ডলারের জন্য প্রবাসীদের ১০৯ টাকা এবং রপ্তানিকারকদের ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিত। ব্যাংকগুলো এখন আমদানিকারকদের কাছে ১১০ টাকায় ডলার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগে আমদানি দায় মেটাতে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করত।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) গত বৃহস্পতিবার এক সভায় ডলারের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।