মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অতিথিরা। আজ রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অতিথিরা। আজ রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে

৩২ লাখের বেশি ডিপিএস খুলেছেন বিকাশের গ্রাহকেরা

বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে গত তিন বছরে ৩২ লাখের বেশি গ্রাহক সঞ্চয়ী আমানত বা ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস) খুলেছেন। আবার যেসব গ্রাহকের ডিপিএসের মেয়াদ ইতিমধ্যে পূর্ণ হয়েছে, তাঁদের ৯৬ শতাংশ পুনরায় বিকাশের মাধ্যমে ডিপিএস খোলার আগ্রহ দেখিয়েছেন।

ঘরে বসে কোনো ধরনের কাগজপত্র ও ব্যাংক হিসাব ছাড়াই সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে এসব সঞ্চয়ী আমানত হিসাব খুলেছেন গ্রাহকেরা। চারটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এসব ডিপিএস খোলা যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিকাশের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। ডিপিএস খোলার এ মাইলফলক উদ্‌যাপনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীজনদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী। সভায় বক্তব্য দেন আইডিএলসি ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম জামাল উদ্দিন, এমটিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা ব্যাংকের এমডি ও সিইও শেখ মোহাম্মদ মারুফ, সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও আহসান জামান চৌধুরী এবং বিকাশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কামাল কাদীর উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিকাশ-এর ডিজিটাল সেভিংস বা সঞ্চয়ী সেবা কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের মাধ্যমে মাসিক ভিত্তিতে ডিপিএস সেবা চালু হয়। পরবর্তী সময়ে চারটি ব্যাংক এ কার্যক্রমে যুক্ত হয়। আর বিকাশ অ্যাপে সাপ্তাহিক ডিপিএস সেবা চালু হয় চলতি ২০২৪ সালের শুরুতে। এ ছাড়া ইসলামি শরিয়াহ অনুসারে সঞ্চয়ের জন্য সিটি ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকের ইসলামিক ডিপিএস সেবাও চালু করেছে বিকাশ। প্রতিষ্ঠান ও ডিপিএসের ধরনভেদে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ চার বছর মেয়াদে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমাতে পারেন গ্রাহকেরা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, পেমেন্ট সেবাকে আরও কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট কাজ করে যাচ্ছে। বিকাশও এই প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখছে। এসব উদ্যোগের কারণে এখন কোনো ঝামেলা ছাড়াই ডিপিএসের টাকা গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্টে চলে যায়।

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এমডি এম জামাল উদ্দিন জানান, বিকাশের এ সেবার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর দ্রুততম সময়ে তাঁদের গ্রাহক ১২ লাখ বেড়েছে। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বন্যার সময়ে এসব গ্রাহকের অনেকে সঞ্চয়ের টাকা তুলে প্রয়োজন পূরণ করেছেন। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁরা পুনরায় সঞ্চয় শুরু করেছেন।

দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকের পক্ষে একা আর্থিক সেবা পৌঁছানো ব্যয়সাপেক্ষ বলে জানান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এই ব্যবস্থাকে সহজ করে দিয়েছে এমএফএস। এ জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন নিয়মনীতি ও সাইবার নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো আর্থিক সেবাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে আসা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তিনি বলেন, ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে জনগণের আস্থা অর্জনে সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রয়োজন।

সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, বিকাশ দেশের ব্যাংক খাতের ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করে দিয়েছে। ব্যাংক-এমএফএস পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের সব প্রান্তের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।

অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সঞ্চয়ের হার এখনো বেশ কম বলে জানান ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন। তিনি বলেন, এই খাতে আরও কাজ করার সুযোগ আছে। নানা প্রয়োজনে ব্যক্তি যখন সঞ্চয় করেন, তখন তা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

অনুষ্ঠানে বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, সমৃদ্ধি শুরু হয় সঞ্চয় থেকে। যেদিন প্রথম এক টাকা সঞ্চয় হয়, সেদিনই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুরু হয়। বিকাশ অ্যাপে সেভিংসের সৌন্দর্য এখানেই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি–সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পাশাপাশি অংশীজন হিসেবে কাজ করা ব্যাংকগুলোর সহায়তা ছাড়া বিকাশের পক্ষে এখানে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না।