বাংলাদেশে ঋণখেলাপিদের প্রথম তলিকা প্রকাশ করা হয় স্বাধীনতার ২০ বছর পর, ১৯৯১ সালে। খুবই ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে সেই তালিকা প্রকাশ করে তৎকালীন বিএনপি সরকার।। রীতিমতো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
১৯৯১ সালের ১৯ মে। তখনকার পটভূমিতে রীতিমতো বোমা ফাটানোর মতোই ঘটনা ছিল সেটি। দেশের প্রধান সংবাদপত্রগুলোয় একযোগে বিজ্ঞাপন আকারে একটি তালিকা প্রকাশ করল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সেটি ছিল ঋণখেলাপিদের তালিকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেটাই ছিল প্রথম ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ। এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ প্রথম জানতে পেরেছিল, কারা কারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয় বিএনপি। ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন এম সাইফুর রহমান। আর এর ঠিক দুই মাসের মাথায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করা ছিল দেশের আর্থিক খাতের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা।
বিজ্ঞপ্তিতে যা লেখা ছিল
বিজ্ঞাপন আকারে ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ঋণতথ্য ইউনিট। প্রকাশিত বিজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তির শুরুতেই খেলাপিদের তালিকা কেন প্রকাশ করা হয়েছে, তার একটি ব্যাখ্যা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘জাতীয় সঞ্চয় ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনিয়োগ সম্পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ঋণ বিশেষ করে ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে পাওয়া ঋণ চালিকা শক্তির ভূমিকা পালন করে। প্রাপ্ত ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করা ঋণপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত। এই প্রক্রিয়ায় যদি ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করা হয় তাহলে আর্থিক সম্পদের চক্রায়ণ ব্যাহত হয়। অপরিশোধিত ঋণ শুধু ঋণ খেলাপকারীদেরই সুবিধা দেয়। সমাজ বা জাতি এ ধরনের খেলাপি ঋণ হতে উপকার পায় না, এতে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশে ব্যাংকব্যবস্থা হতে গৃহীত ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। ইহা জনস্বার্থের পরিপন্থী। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জনস্বার্থে ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশের প্রয়োজন মনে করে। প্রাথমিক পর্যায়ে একক ব্যাংকের নিকট যেসব ঋণগ্রহীতার খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩১শে ডিসেম্বর, ১০ তারিখে ২.৫ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব তাদের একটি তালিকা ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট ১৯৯১-এর ৩৭ নং অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক এতৎসঙ্গে প্রকাশ করল। তালিকাটি বাংলাদেশে কার্যরত বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক হতে প্রাপ্ত তথ্য একীভূত করে প্রস্তুত করা হয়েছে।’
ঋণখেলাপিদের প্রথম তালিকা চার দিন ধরে প্রকাশ করা হয়েছিল একাধিক পত্রিকায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) আলাদাভাবে তালিকা প্রকাশ করেছিল। তালিকায় শীর্ষ খেলাপি হিসেবে কোনো ক্রম করা হয়নি। শুধু প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ
উল্লেখ ছিল।
আইসিবি তালিকা প্রকাশ করার সময় একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছিল। সোনালী, অগ্রণী বা রূপালী ব্যাংক অবশ্য কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। আইসিবির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল, ‘এতদ্দ্বারা নিম্নবর্ণিত খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক জানানো যাচ্ছে যে, বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আপনারা আইসিবির পাওনা অর্থ পরিশোধ করছেন না। এহেন পরিস্থিতিতে আইসিবির ঋণ/অর্থ পুনঃচক্রায়ণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে দেশের পুঁজিবাজার ও শিল্প উন্নয়নের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এমতাবস্থায় ২৪শে মে, এর মধ্যে আইসিবির পাওনা পরিশোধের জন্য আপনাদেরকে পুনরায় পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে, অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ সকল প্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
কাদের নাম ছিল তালিকায়
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত তালিকায় ছিল ১৭১টি প্রতিষ্ঠানের নাম। আইসিবির তালিকায় ছিল ৩৪টি নাম। রূপালী ব্যাংক প্রকাশ করেছিল খেলাপি ৫১ প্রতিষ্ঠানের নাম। সোনালী ব্যাংক ৬৩ এবং অগ্রণী ব্যাংকের প্রকাশিত তালিকায় ছিল ৭১ প্রতিষ্ঠানের নাম।
তালিকায় থাকা উল্লেখযোগ্য নাম ছিল বাংলাদেশ ম্যাচ কোম্পানি লিমিটেড, শিনান (বাংলাদেশ) লিমিটেড, বি এইচ ইঞ্জিনিয়ারিং, মুসলিন কটন মিলস, এম আর ট্যানারি, এ গফুর জুট বেলিং, ইমারল্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, কাশেম গ্রুপ, শাহ গ্রুপ, ঢাকা রি-রোলিং, ইস্টার্ন ফার্মা, বসাক লিমিটেড, রোমিও গার্মেন্টস, বরিশাল ফিশিং, হাইস্পিড নেভিগেশন, টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্দান ডিস্টিলারিজ, সালেহ কার্পেটস, কে অ্যান্ড কিউ, আহমেদ জুটেক্স, ক্রিসেন্ট জুট, লিবরা ফার্মা, রূপণ ওয়েল, হোটেল হলিডে ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সেন্ট মার্টিন, নিপ্পন মোটরস ইত্যাদি।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, তালিকায় বেশির ভাগই ছিল পাট খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই এখন আর চালু নেই। পরে যারা বড় ঋণখেলাপি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, তারা প্রথম তালিকায় ছিল না। তা ছাড়া তখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ ছিল বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকে। তার পরই ছিল বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার অবস্থান। ’৮০-এর দশকে, এরশাদ আমলে এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। ওই দুই প্রতিষ্ঠান তত দিনে কার্যত অচল হয়ে যায়। এই দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির তালিকা পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা
তালিকা প্রকাশের পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল ব্যাপক। বেসরকারি খাতের নেতারা এর সমালোচনা করেছিলেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছিল। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন শেগুফতা বখত চৌধুরী। তালিকা প্রকাশের এক সপ্তাহ পরে তিনি এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, ‘ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনতেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, কাউকে পঙ্গু বা হেয় করা উদ্দেশ্যে নয়।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ব্যাংক খাতে দেওয়া ২২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৬ হাজার কোটি টাকাই আদায়ের অযোগ্য ঋণ। আড়াই কোটি টাকার বেশি অঙ্কের দেনা পরিশোধে যারা ব্যর্থ হয়েছে, এমন ২২৩টি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে তফসিলি ব্যাংক, আইসিবি, শিল্পঋণ সংস্থার কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেনা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি কোম্পানির দেনা ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে বড় অঙ্কের খেলাপিদের দ্বিতীয় তালিকা চূড়ান্ত করা হলেও তা কবে প্রকাশ করা হবে, তা আর তিনি জানাননি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শেগুফতা বখত চৌধুরী সে সময় আরও বলেছিলেন, ব্যাংকগুলো জাতীয়করণের পর থেকেই ব্যাংকের টাকা নিয়ে পরিশোধ না করার অভ্যাস ও আচরণ ব্যাপক হয়ে উঠেছে। তবে বেসরকারি ব্যাংক জন্ম নেওয়ার পর আইনকানুন পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। সংসদে এ আইন (ব্যাংক কোম্পানি আইন) পাস হয়েছে। এ আইনের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের অনাদায়ি ঋণের বড় খাতকদের নাম, দেনার অঙ্কসহ তথ্যলাভের যেমন অধিকার পেয়েছে, তেমনি ঋণ আদায়ের জন্য বিশেষ আদালতের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কোনো ব্যাংকার বা ব্যাংক অফিসারের অনিয়ম খুঁজে পাওয়া গেলে তিন বছরের জেল ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কাউকেই শাস্তি দিতে পারে না। দণ্ড বিধানের এখতিয়ার আদালতের।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর আরও বলেছিলেন, ‘ব্যাংকের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের চুক্তি লঙ্ঘন দেওয়ানি অপরাধ। এর জন্য বিচারে আদালত সম্পত্তি ক্রোকের মতো নানা পদক্ষেপ নিতে পারেন।’ যদিও এসব পদক্ষেপ পরে আর দেখা যায়নি। বলা প্রয়োজন, নানা চাপে চূড়ান্ত করেও দ্বিতীয় তালিকা কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
তালিকা প্রকাশ পছন্দ হয়নি যাদের
আগেই বলা হয়েছে, পত্রিকায় এভাবে তালিকা প্রকাশ পছন্দ করেনি অনেকেই। বিশেষ করে বেসরকারি খাত থেকে আপত্তি উঠেছিল বেশি। ৫ জুন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল চারটি চেম্বারের নেতারা। তাঁরা ঢালাওভাবে খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের নাম প্রকাশে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। বিবৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন বা এফবিসিসিআই, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘ব্যাংকের ঋণ ফেরত দানের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। তবে ন্যায়বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের দুই ভাগে ভাগ করা উচিত। এক, যারা ইচ্ছা করে বকেয়া পরিশোধ করেন নাই এবং দুই, যারা ঋণের অর্থ অনুমোদিত প্রকল্পে বিনিয়োগ করেও বাস্তব কারণে ফেরত দিতে পারছে না। চেম্বার নেতৃত্ব এ ব্যাপারে একটি শিল্প কমিশন (আধা বিচার বিভাগীয়) গঠনের প্রস্তাব দিচ্ছে। এই কমিশন বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠন করে খেলাপি ঋণ ও শিল্পে অসুস্থতার কারণগুলো চিহ্নিত করে অবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে এলেই ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপিসংক্রান্ত জনপ্রিয় বিষয়টি সামনে আনার ইতিহাস বেশ পুরোনো। যদিও এখন পর্যন্ত এর বাস্তব কোনো সুরাহা হয়নি। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এ নিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।
পরিস্থিতি যেভাবে পাল্টে যায়
শুরুতে সে সময় সরকার কঠোর অবস্থানে ছিল। কেবল খেলাপির তালিকা প্রকাশই নয়, বরং ঋণখেলাপিদের নতুন ঋণ গ্রহণ এবং সুদ মওকুফের ওপর বিধিনিষেধ আরোপও করেছিল। তীব্র আপত্তির মুখে ১৯৯১-এর শেষের দিকে সেই বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। সরকারের যুক্তি ছিল ‘দেশের শিল্পায়ন কর্মসূচি ত্বরান্বিত এবং অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠা’।
একই বছরের নভেম্বর মাসে বিভিন্ন পত্রিকায় বিধিনিষেধ শিথিল এবং নতুন সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে একের পর এক বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপনের শিরোনামে বলা ছিল, ‘খেলাপি ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা’। সেখানে বলা হয়, ‘প্রতিটি প্রকল্পের গুণাগুণের ভিত্তিতে এবং কোম্পানি কর্তৃক আবেদনের সঙ্গে বিভিন্ন হারে ডাউন পেমেন্টসহ সুনির্দিষ্ট শর্তাদি পরিপালন সাপেক্ষে ১০০% দণ্ড সুদ ও ৪০% থেকে ৭৫% পর্যন্ত সাধারণ সুদ মওকুফের সুযোগ গ্রহণের জন্য খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার মেয়াদ ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৯১ তারিখে শেষ হবে। যেসব ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রেও মওকুফ-এর সুযোগ আছে। সময়মতো আবেদন করে এই সুযোগ গ্রহণ করুন।’
এ নিয়ে ১৭ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করে বলা হয়েছিল, ‘দিনকয়েক ধরিয়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এই মর্মে কোন কোন ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হইতেছে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খেলাপি ঋণের বিশেষ সুযোগ প্রদানে সম্মত হইয়াছেন। যেহেতু প্রতিটি ব্যাংকের প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ভাষা প্রায় অভিন্ন, সেহেতু বুঝা যাইতেছে যে, সম্মিলিতভাবে চিন্তাভাবনা করিয়াই এই পদক্ষেপ গৃহীত হইয়াছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। আমরা আশা করিব, যে রকম সদিচ্ছা প্রণোদিত হইয়া ব্যাংক কর্তৃক এই ধরনের ঋণের সুযোগ প্রদান করিতেছেন, প্রত্যেক ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও অনুরূপ মনোভাব লইয়াই এই সুযোগ গ্রহণ করিবেন।’
তবে সেই আশাবাদ কেবল পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতাতেই রয়ে গেছে। খেলাপিরা নতুন ঋণ নেওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন ঠিকই, তবে তা পরিশোধ সবাই করেননি। বরং দেখা গেছে, ’৯০-এর পরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে অনেক বেশি পরিমাণে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক। এখন শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই ’৯০-এর দশকের পরের সৃষ্টি। তাঁদের বড় অংশই অবশ্য নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিজেদের খেলাপি ঋণ আড়াল করে রেখেছেন। ফলে প্রকৃত চিত্র পাওয়াটা কঠিন। সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে, দেশে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই খেলাপির বড় অংশই তৈরি হয়েছে গত ১৫ বছরে।
এবার ঋণখেলাপিদের পরের তালিকা প্রসঙ্গ। পরের তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছিল আরও অনেক পরে, ১৯৯৮ সালে। সেই তালিকা প্রকাশ নিয়েও আছে নানা গল্প। সেই গল্প বরং আরেক দিন করা যাবে।