সুযোগ-সুবিধা কমানোর প্রতিবাদে করণীয় নির্ধারণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা যে সভা ডেকেছিলেন, সেটি আজ সোমবার শেষ পর্যন্ত হয়নি। এর আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স কাউন্সিলের নেতাদের ডেকে নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আলোচনায় তিনি আগামী অর্থবছরে তাঁদের কিছু দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি সভা না করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন বলে জানা গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডাকা সভাটি স্থগিত করে অফিসার্স কাউন্সিল।
অফিসার্স কাউন্সিলের পক্ষ থেকে কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গভর্নরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সভাটি স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য উচ্চতর বেতনকাঠামো থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে উল্টো সুযোগ-সুবিধা কমানো হচ্ছে। আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগদানের পর ‘বাংলাদেশ ব্যাংককে অ্যাপেক্স রেগুলেটরি বডি’ করার ঘোষণা দিয়েছেন; কিন্তু কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা কমানো সেই ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে আজ সোমবার বিকেল চারটায় মতবিনিময় সভা আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স কাউন্সিল।
তবে বেলা একটার দিকে অফিসার্স কাউন্সিলের নেতাদের ডেকে নেন গভর্নর। এ সময় তিনি তাঁদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে জানতে চান। শিগগির সব দাবি মানা না হলেও আগামী অর্থবছরে কিছু দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি কোন ধরনের সভা না করার নির্দেশনা দেন। ওই আলোচনায় উপস্থিত তিনজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরপরই সভাটি স্থগিত করার নোটিশ দেয় অফিসার্স কাউন্সিল।
এর আগে সভার বিষয় উল্লেখ করে অফিসার্স কাউন্সিলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে সব সদস্যের কাছে এক পৃষ্ঠার বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছিল। এতে বলা হয়, কর্মকর্তারা এত দিন শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেলেও এখন তা আর নেই। বনিয়াদি প্রশিক্ষণের ফলাফলের ভিত্তিতে অতিরিক্ত যে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো এবং ট্রেনিং একাডেমির কর্মকর্তাদের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে যে ভাতা দেওয়া হতো, তা বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ ও প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগের সময় একাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে যে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো, সেসব সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, যেকোনো সুবিধা কমানো হলে নিশ্চিতভাবেই কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টি ও কর্মস্পৃহায় প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংককে শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিণত করার যে লক্ষ্য গভর্নর ঘোষণা করেছেন, উল্লিখিত বিষয়গুলো তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব বিষয় সমাধানের জন্য আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন আলোচনায় গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি বারবার আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। এ অবস্থায় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়েছে।