কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন

এজেন্ট ব্যাংকিং আমানতে ধাক্কা 

গত বছরের শেষ তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত কমেছে ৫০৫ কোটি টাকা। তবে প্রবাসী আয় প্রত্যাবাসন ও ঋণ বিতরণ বেড়েছে। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের ব্যাংক খাত ডলার–সংকটসহ নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গত বছরের শেষ দিকে এসে দেশের ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক অনিয়ম সামনে আসে। এতে মানুষের মধ্যে ব্যাংকে টাকা রাখা নিয়ে বেশ উদ্বেগ দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে তিন মাসে ৫০৫ কোটি টাকার আমানত উঠে গেছে। 

বাংলাদেশে ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং–বিষয়ক সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ও তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত বছরের শেষ প্রান্তিক অক্টোবর-ডিসেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিং এর আগের তিন মাসের তুলনায় আমানত হারিয়েছে ৫০৫ কোটি টাকা। তাতে গত ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা এর আগের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ছিল ৩০ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। 

আমানত কমার কারণ হিসেবে ব্যাংক খাতে বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে, তারই আঁচ বলে মনে করেন ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরফান আলী। দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের অন্যতম এই উদ্যোক্তা প্রথম আলোকে বলেন, দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এ ধারার ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের খরচ বেড়েছে। তাতে সঞ্চয় করার প্রবণতা কমেছে এবং সঞ্চয় ভাঙার দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে আরও সেবা নিয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে। পাশাপাশি এজেন্টদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাদার ব্যাংকার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করেন তিনি। 

তবে গত বছরের শেষ তিন মাস অক্টোবর–ডিসেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয় প্রত্যাবাসন বেড়েছে। ঋণ বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। আর প্রবাসী আয় এসেছে ৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩০৭ হাজার কোটি টাকা। আর প্রবাসী আয় এসেছে মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। 

তবে শুধু যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত কমেছে, তা–ই নয়। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ ব্যাংকিংয়ের আমানতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত কমেছে ১ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সাধারণ ব্যাংকিং–সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি আরেক প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংক খাতের ডিমান্ড ডিপোজিট বা যখন-তখন উত্তোলনযোগ্য স্বল্পমেয়াদি আমানত গত বছরের শেষ ছয় মাসে ৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা কমেছে। 

দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের যাত্রা শুরুর ৯ বছরে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখের বেশি। গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্টের সংখ্যা ১৫ হাজার ১২৬টি, আর এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৭৩৬টি। 

সম্প্রতি ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে সার্বিকভাবে আমানত কমেছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো অন্যতম অংশীদার। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত সংগ্রহের ৩৬ শতাংশই করে থাকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।