এবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এস আলমমুক্ত, নতুন পরিচালক নিয়োগ

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার লক্ষ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। একজন উদ্যোক্তা শেয়ারধারীকে পরিচালক ও চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি এই ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে। একই সঙ্গে আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে, যে সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।

একই আদেশে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিত করা ও জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠনের জন্য পাঁচজনকে পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালক হলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. রেজাউল হক। তিনি এই ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা শেয়ারধারী। এ ছাড়া নতুন স্বতন্ত্র পরিচালকেরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাকসুদা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোরশেদ আলম খন্দকার এবং হিসাববিদ মো. আনোয়ার হোসেন।

নতুন এই পরিচালকদের মধ্য থেকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্বিতীয় ব্যাংক হিসেবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে এস আলমমুক্ত করা হলো। এর আগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ওই ব্যাংকটিতেও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন বেলাল আহমেদ, যিনি এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের জামাতা। চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে এসআইবিএলের মালিকানায় আসে। মালিকানা পরিবর্তনের সময় বাদ দেওয়া হয় কয়েকজন উদ্যোক্তা ও পরিচালককে। এরপর ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ টাকা বের করে নেওয়া হয়। যে কারণে ব্যাংকটি ইতিমধ্যে আর্থিক সংকটে পড়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত চলতি হিসাবেও ঘাটতিতে রয়েছে।

সেই সঙ্গে এই ব্যাংকের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১১ আগস্ট সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের হাত থেকে মুক্ত করতে মানববন্ধন করেছেন ব্যাংকটির কিছু শেয়ারধারী। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা অভিযোগ করেন, এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে তুলে পাচার করেছেন। এতে শুধু এসআইবিএল নয়, পুরো আর্থিক খাতই হুমকির মুখে পড়েছে। সাধারণ আমানতকারীরা তাঁদের জমাকৃত অর্থ প্রয়োজন অনুযায়ী তুলতে পারছেন না।

মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হকসহ কয়েকজন সাধারণ ও উদ্যোক্তা শেয়ারধারী উপস্থিত ছিলেন।

গত সপ্তাহে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে ইসলামী ব্যাংকে নতুন পর্ষদ গঠন করে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেন।

সে সময় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, যাঁরা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না। টাকা উদ্ধারে আইনগত যত পন্থা আছে, সবই অনুসরণ করা হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলো নিয়েও একই সিদ্ধান্ত হবে।