প্রবাসী ও রপ্তানি আয়

ডলারের দাম বাড়ল ১ টাকা

ব্যাংকারদের দুই সংগঠন এবিবি ও বাফেদা মিলে গতকাল ডলারের দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন এ দাম আজ সোমবার থেকে কার্যকর হবে।

ডলার
ছবি: রয়টার্স

ডলারের দাম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। বাজারভিত্তিক ডলারের দামের বদলে এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রেও ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে রপ্তানিকারকেরা রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম পাবেন ১০৬ টাকা। আর প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম হবে ১০৮ টাকা।

ডলারের নতুন দামের এ সিদ্ধান্ত আজ সোমবার থেকে কার্যকর করা হবে। এত দিন রপ্তানিকারকেরা প্রতি ডলারের জন্য স্থানীয় মুদ্রায় দাম পেতেন ১০৫ টাকা। আর প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ছিল ১০৭ টাকা। গতকাল রোববার ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা এক অনলাইন সভায় সম্মিলিতভাবে ডলারের দাম আরেক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক। এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম নতুন করে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম মে মাসের শুরুতে কার্যকর হবে।
সেলিম আর এফ হোসেন, চেয়ারম্যান, এবিবির ও এমডি ব্র্যাক ব্যাংক

নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আমদানিতে ডলারের দাম পড়বে ১০৭ টাকা। এখন ডলার-সংকটের কারণে ১১০ টাকার চেয়ে বেশি দামে আমদানির ঋণপত্র খুলছে অনেক ব্যাংক। ফলে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনছে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে সংকট কতটা মিটবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এদিকে হুন্ডিতে বা অবৈধ পথে আসা ডলারের দাম প্রায় ১১০ টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো ঘোষিত দামের চেয়ে ডলারের দাম বেশি দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তির মুখে পড়তে হয়। এই কারণে ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিয়ে প্রবাসী আয় আনতে পারছে না। ফলে বৈধ পথে কমছে প্রবাসী আয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকে এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এই দুই সংগঠন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার-সংকট যতটা প্রকট ছিল, তা অনেকটা কমে এসেছে। তবে আমদানি ঋণপত্র খোলা কমে গেছে। তাতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের মজুত কিছুটা বেড়েছে।

এদিকে ডলারের নতুন দাম নির্ধারণবিষয়ক এবিবি ও বাফেদার গতকালের সভায় অংশ নেওয়া একাধিক ব্যাংকার জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে সব ক্ষেত্রে ডলারের এক দাম নির্ধারণ করতে হবে। এর অংশ হিসেবে ডলারের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বাজারে যে দামে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে, তার চেয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক দাম কম। এ কারণে সামনে ডলারের দাম আরও বাড়াতে হবে।

জানা গেছে, সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে। তাতে গত ২৬ এপ্রিল রিজার্ভ কমে হয়েছে ৩ হাজার ১০৬ কোটি ডলার। এ ছাড়া মার্চ ও এপ্রিল মাসের জন্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) প্রায় ১২০ কোটি টাকা দায় পরিশোধ করতে হবে কিছুদিনের মধ্যে। ওই দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৩ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে।

ডলার-সংকটের মধ্যে ঈদের মাসে দেশে প্রবাসী আয় আসা আগের চেয়ে কমে গেছে। এপ্রিল মাসের ১ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ১৫০ কোটি ডলার। অথচ গত মার্চে দেশে এসেছিল ২০১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। এপ্রিল শেষে প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৬৫ কোটি ডলারে।

জানতে চাইলে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক। এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম নতুন করে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম মে মাসের শুরুতে কার্যকর হবে। এর ফলে ডলারের দাম বাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রবাসী আয়ে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা থাকায় প্রবাসীরা প্রতি ডলারে ১১০ টাকা ৭০ পয়সা পাবেন। এতে প্রবাসী আয় বাড়বে বলে আশা করছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো রিজার্ভ থেকে ১০৩ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে, তাহলে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক হবে কীভাবে, এই প্রশ্নের জবাবে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আগামী জুন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকও একই দরে ডলার বিক্রি করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব কোনো দর থাকবে না।