ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

টিআইবির বিবৃতি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে স্বেচ্ছাচারিতামূলক গোপনীয়তা আরোপের নিন্দনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এমন পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে জনস্বার্থে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তথ্য প্রকাশে অবিলম্বে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার বিকেলে টিআইবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তথ্য সংগ্রহে সংবাদকর্মীরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশের ক্ষেত্রে এক মাসের বেশি সময় ধরে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ সমস্যা সমাধানে গভর্নরের সহায়তা চাইলেও ইতিবাচক কোনো ফল আসেনি।

এমন সিদ্ধান্তকে জনগণের তথ্য জানার আইনসিদ্ধ অধিকার নিশ্চিতের পথে অনৈতিক ও স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ উল্লেখ করে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘খেলাপি ঋণ, আর্থিক প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং সার্বিক সুশাসনের অভাবসহ নানাবিধ সংকটে ব্যাংক খাত জর্জরিত। এমন সময়ে তথ্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কী বার্তা দিতে চান? তবে কি খাদের কিনারায় উপনীত ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এই উদ্যোগ নাকি যারা ঋণখেলাপি, জালিয়াতিসহ এ খাতের সংকটের জন্য দায়ী, তাদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়াস এটি?’

গত কয়েক বছরে আর্থিক খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির তথ্যগুলোর বেশির ভাগই সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকারের সূত্র ধরে এসেছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কি তাহলে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মতো অপরাধীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ও নেতৃত্ব যে অপরাধী চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে, তা গোপন করতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গভর্নর যে পাসনির্ভর ব্যবস্থা চালু করার কথা বলছেন, প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিচ্ছেন, তা সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব, বিশেষ করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাস্তবে অপ্রতিরোধ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেকোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সাক্ষাৎ প্রদানে বিরত থাকতে চাইবেন। কারণ, সাক্ষাতের পর সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলে নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক জবাবদিহির নামে হয়রানি করা হবে। অর্থাৎ তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ কার্যত রুদ্ধ হবে। ব্যাংক খাতে কী হচ্ছে, কেন এবং কারা জনগণের অর্থ লোপাটের ফলে লাভবান হচ্ছেন, তা জানার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হবেন।

টিআইবি মনে করছে, গোপনীয়তার ঘেরাটোপ আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত শুধু স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং ঔপনিবেশিক মানসিকতারও পরিচায়ক। তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশের পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।