বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা সমন্বয় করা দরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নির্ধারণ করেছে, সেই হারে ঋণ নেওয়া হলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না।
২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এ মতামত দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে নীতি সুদহার আরও বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়, যা ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পর্যবেক্ষণও কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়।
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে। নীতি সুদহার বাড়িয়েও তার রাশ টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, বাংলাদেশের সরবরাহশৃঙ্খল ও বাজার কাঠামোতে গলদ আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম যেভাবে কমছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এমনটা মনে করছে। সেই সঙ্গে মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য নীতির সাপেক্ষে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে তারা মনে করছে।
মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিপ্রেক্ষিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বলা হয়, উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশও মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিয়েছে। যদিও বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহব্যবস্থাজনিত সমস্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে বিশেষ কাজ হয়নি। এর ফলে মূল্যস্ফীতির বর্তমান গতিধারার পরিপ্রেক্ষিতে মুদ্রানীতি কমিটি আবারও নীতি সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক একই সঙ্গে অন্যান্য পদক্ষেপ নেবে।
এ ছাড়া সভায় মূল্যস্ফীতির বর্তমান গতিপ্রকৃতি, তারল্য, সুদহার, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের ওঠানামা পর্যবেক্ষণ করা হয়। সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতায় জোর দেওয়া হয়। বৈশ্বিক বা আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন দরকার বলে সভায় মত দেওয়া হয়।
গত জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেয় ২৫ আগস্ট। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত জুলাই মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে। বিবিএসের হিসাবে, জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
নীতি সুদহার বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে অর্থের সরবরাহ কমানো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে, বাজারে অর্থের সরবরাহ বেশি এবং সে কারণে মূল্যস্ফীতির সূচক বাড়ছে, তাহলে অর্থপ্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হয়। নীতি সুদহার বাড়লে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে ঋণ দেয়, তার সুদহারও বাড়ে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হয়।