বৈশ্বিক সংকটে রপ্তানি খাতকে চাঙা রাখতে ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারবেন রপ্তানিকারকেরা। এতে সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। নতুন এ তহবিলের নাম রপ্তানি সহায়ক তহবিল। এ তহবিল থেকে দেশীয় মুদ্রা টাকায় ঋণ দেওয়া হবে।
রপ্তানি খাতকে সহায়তা দিতে আগে থেকেই রিজার্ভের অর্থে গঠন করা আছে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)। তহবিলটির আকার ৭০০ কোটি ডলার। সেখান থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নিতে পারেন রপ্তানিকারকেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রোববার নতুন তহবিল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, রপ্তানি খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকা শক্তি। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীল রাখতে রপ্তানি খাতকে সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন।
ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের দায় পরিশোধের জন্য এ তহবিল রপ্তানিকারকদের জন্য সহায়ক হবে।মোহাম্মদ হাতেম, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি
এ ছাড়া করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বেগবান করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন এ তহবিল থেকে কারা ঋণ নিতে পারবে, তা-ও উল্লেখ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি বা স্থানীয় পর্যায় থেকে সংগ্রহের বিপরীতে তহবিল থেকে অর্থায়ন নিতে পারবে। সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক—উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য এ তহবিল উন্মুক্ত থাকবে। তহবিলের অর্থ রপ্তানিকারকের ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যবহার করা যাবে। ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদনকারী-সরবরাহকারী কাঁচামাল আমদানির এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার পর পণ্য রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানিমূল্য অপ্রত্যাবসিত থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নতুন করে আরও ঋণ পাবে না। তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে রপ্তানিমূল্য যথা সময়ে প্রত্যাবসিত না হলে আরও একবার সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা নতুন ঋণসুবিধা নিতে পারবেন। নতুন ঋণ দেওয়ার আগে পূর্বের ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে সৃষ্ট দায়ের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ গ্রাহককে নগদে পরিশোধ করতে হবে। তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট গ্রাহক রপ্তানি ঋণপত্রের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য কোনো তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে থাকলে এ তহবিলের আওতায় কোনো ধরনের ঋণ পাবে না। গ্রাহক পর্যায়ে সুদ বা মুনাফার হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। নির্ধারিত মাশুলের বাইরে অন্য কোনো মাশুল আদায় করা যাবে না।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের দায় পরিশোধের জন্য এ তহবিল রপ্তানিকারকদের জন্য সহায়ক হবে।