ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ব্যাংক হিসাব

ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও লেনদেন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে (পিএসপি) বিনা খরচে এই হিসাব খোলা যাবে।

ব্যাংক

ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসায়িক হিসাব খুলতে পারবেন ছোট ব্যবসায়ীরা। হিসাবটি ব্যবসায়িক হলেও তা হবে ব্যবসায়ীর নামে। ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও লেনদেন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে (পিএসপি) এই হিসাব খোলা যাবে।

হিসাব খুলতে কোনো খরচ দিতে হবে না, আবার লেনদেনের ওপর মিলবে ঋণ। হিসাবটি এমএফএসে হলে টাকা উত্তোলনের খরচ কম হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার ঋণ প্রকল্প চালু করতে বলেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপিগুলো এখন ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেবে।

এ বিষয়ে দেশের ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে অনুষ্ঠিত ওই কর্মশালাতেই নির্দেশনা দেওয়া হয়। ছোট ব্যবসায়ীদের নতুন এই হিসাবের নাম হবে ‘পারসোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট’ বা ‘ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব’।

কর্মশালায় জানানো হয়, শ্রমনির্ভর অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, সামাজিকমাধ্যমে ব্যবসা করে এমন ছোট উদ্যোক্তা এই হিসাব খুলতে পারবেন। ব্যাংক ও এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবের ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব হবে চলতি হিসাব। এই হিসাবের মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করে অর্থ নিতে পারবেন।

অন্যান্য লেনদেনও করা যাবে। লেনদেন সন্তোষজনক হলে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক থেকে ঋণও পাবেন ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের ব্যাংক হিসাবে মাসে ১০ লাখ টাকা লেনদেন করা যাবে। এমএফএসে মাসে মোট লেনদেন করা যাবে পাঁচ লাখ টাকা। পিএসপি ই-ওয়ালেটের ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবের ক্ষেত্রে মাসিক লেনদেন করা যাবে ১০ লাখ টাকা।

ব্যবসায়ীরা এই হিসাব পরিচালনার মাধ্যমে পণ্যের মূল্য গ্রহণ করার পর তার লেনদেন বিবেচনায় যে ঋণ পাবেন তা হবে ঝামেলাহীন ও সহজ শর্তে। হিসাবটি ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা পাইকারিতে কেনা পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবেন। প্রচলিত সব ব্যাংকিং সুবিধা মিলবে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবে। এতে নগদ টাকার ব্যবহার কমবে।

কর্মশালায় ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ জিয়াউল হক। তিনি বলেন, ‘যাঁদের কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই, তাঁদের জন্যই এই হিসাব।

আবার তাঁরা ব্যাংক বা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে হিসাব খুলতে আসবেন তেমনটাও না হতে পারে। বরং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব ক্ষুদ্র-অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে যেতে হবে। তাঁদের ডিজিটাল পেমেন্ট ও ক্যাশলেস সোসাইটি সম্পর্কে বোঝাতে হবে। কাজটি কঠিন হলেও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থার জন্য এর বিকল্প নেই।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. খুরশীদ আলম, পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা রাশেদ আল হাসান।

হিসাব খোলার উপায়

অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যেমন মুদিদোকানি, ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বিক্রেতা, ভাসমান খাদ্যপণ্য বিক্রেতা, বাস-সিএনজি-রিকশাচালক, ফুচকা-চটপটি বিক্রেতা বা স্থানীয়ভাবে ছোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এই হিসাব খুলতে পারবেন।

হিসাবটি খোলার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের এক কপি অনুলিপি ও পেশার প্রমাণপত্র দিলেই হবে। পেশার প্রমাণপত্রের জন্য ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক নয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতির দেয়া বৈধ কাগজ হলেই হবে। বিনা খরচে এই হিসাব খুলে দেবে দেশের সব ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।