কারফিউর মধ্যে ব্যাংক ও ইন্টারনেট-সেবা বন্ধ থাকায় বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম অনেকটা থমকে ছিল। বন্ধ ছিল বেশির ভাগ এমএফএস এজেন্টের কার্যক্রম। যেসব এজেন্ট পয়েন্ট খোলা ছিল, তারা ব্যাংকে টাকা জমা করতে না পারায় ইলেকট্রনিক মানি (ই-মানি) পাওয়া যায়নি। আগের ই-মানিও ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে এজেন্টদের কার্যক্রম গতকাল মঙ্গলবার প্রায় পুরোটাই বন্ধ হয়ে যায়।
তবে গ্রাহকেরা যাঁরা আগে থেকে নিজেদের হিসাবে টাকা জমা করে রেখেছিলেন, তাঁরা কিছু সেবা নিতে পেরেছেন। মোবাইল রিচার্জ, অন্যকে টাকা পাঠানো, কিছু বিল পরিশোধ করার মতো সীমিত পরিসরে সেবা পাওয়া গেছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময় ইউএসএসডি পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা নেওয়ার চেষ্টা করেন গ্রাহকেরা। এই সেবার জন্য এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের গ্রাহকেরা *২৪৭#, নগদের গ্রাহকেরা *১৬৭# ও রকেটের *৩২২# ডায়াল করেন। কিন্তু দেখা গেছে, অনেক গ্রাহক সেবা পেতে বিলম্ব বা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন।
এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, কার্যকর মোবাইল ব্যাংকিং সেবার জন্য ব্যাংকের পাশাপাশি ইন্টারনেট-সেবা প্রয়োজন। এ দুটি সক্রিয় হলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা।
বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা জমা করতে না পারলে এমএফএস কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় ই-মানি তৈরি হয় না। ব্যাংক বন্ধ থাকায় পরিবেশকেরা টাকা জমা করতে পারছেন না। ফলে এমএফএসগুলোর ই-মানি ধীরে ধীরে কমে আসছে। লেনদেন করতে সমস্যা হচ্ছে।’
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত পরিবেশকের মাধ্যমে ব্যবসাটি পরিচালনা করে। প্রতিটি এলাকার পরিবেশকদের অধীনে এজেন্টরা এই সেবা দেয়। পরিবেশকেরা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে এজেন্টদের চাহিদামতো ই-মানি কিনে নেয়। সেই ই-মানি এজেন্টরা গ্রাহকের হিসাবে টাকা জমা, বা অন্যকে টাকা পাঠানো, কিংবা মোবাইল রিচার্জ, বিল পরিশোধসহ নানা সেবায় ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমও বন্ধ ছিল।
এজেন্টরা পরিবেশকদের মাধ্যমে ই-মানি কিনলেও গ্রাহকেরা নিজেরাই ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে ই-মানি কিনতে পারেন। তবে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে গ্রাহকেরা নিজেদের হিসাবে টাকা জমা দিতে পারেননি। এজেন্টের মাধ্যমেও তাঁরা টাকা জমা করতে পারেননি। অবশ্য যাঁরা আগে থেকে নিজের হিসাবে টাকা জমা রেখেছিলেন, তাঁরা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন। ফলে সীমিত পর্যায়ে লেনদেন হয়েছে।
এমএফএস গ্রাহকদের অনেকেই অবশ্য সম্প্রতি অ্যাপে অর্থ লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট-সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় এই গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। দেশের শীর্ষ এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ সেবা স্থগিত রাখে। তবে মোবাইল ফোনে রিচার্জ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইউএসএসডি পদ্ধতি ব্যবহার করে সীমিত পর্যায়ে লেনদেন হয়েছে।
বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সবাই ইউএসএসডির মাধ্যমে সেবা নেওয়ার চেষ্টা করেন। এর বিপরীতে চাহিদামতো মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে ইউএসএসডি সেবা পাওয়া যায়নি। আবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় তৈরি হয়নি ই-মানি। ফলে সেবা পেতে অনেকের বিলম্ব বা সমস্যা হয়েছে। এরপরও আগের চেয়ে মোবাইল রিচার্জের পরিমাণ বেড়েছে এবং টাকাও বেশি পাঠানো হয়েছে।
আগে প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ কোটি টাকার মোবাইল ফোন রিচার্জ করতেন নগদ গ্রাহকেরা। গত কয়েক দিনে তা বেড়ে হয়েছে ১৫-১৮ কোটি টাকা। একইভাবে বিল পরিশোধও ৭-৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫-১৮ কোটি টাকা।
নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগদ টাকা জমা ও উত্তোলন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত ডিজিটাল লেনদেনই হয়েছে। ফলে নতুন করে ই-মানির প্রয়োজন হচ্ছে না। এ জন্য আমাদের সেবা একমুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। তবে ইন্টারনেট না থাকায় সম্ভব হয়নি ই-মানি তৈরি।’