পদত্যাগ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারেক রিয়াজ খান। গত রোববার তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর পর থেকে আর ব্যাংকে যাচ্ছেন না। পদত্যাগের জন্য তিনি ‘ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যগত কারণ’ উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত আছেন এমন একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছেন যে তারেক রিয়াজ খান ‘অন্য কারণে’ ব্যাংকটি ছেড়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
গত বছরের মার্চে তারেক রিয়াজ খান তিন বছরের জন্য পদ্মা ব্যাংকে এমডি হিসেবে যোগ দেন। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত তাঁর মেয়াদ ছিল। এর আগে তিনি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ডিএমডি ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ছিলেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তারেক রিয়াজ খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালকও সাড়া দেননি। ফলে ব্যাংকটির আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকটির একজন পরিচালক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তিনি এমডির পদত্যাগসংক্রান্ত একটি নোটিশ পেয়েছেন।
ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের চাপে কোনো এমডি যাতে পদত্যাগ না করেন, এ জন্য সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অনেক ক্ষেত্রে তা কাজে আসছে না। এর মধ্যে শুধু ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি পদত্যাগের পর আবার ব্যাংকে ফিরেছেন। বেশির ভাগ এমডি সুরক্ষা চাওয়ার সাহস করছেন না। এর আগে একাধিক ব্যাংকের এমডি চাপের মুখে পদত্যাগ করে চলে গেছেন।
পদ্মা ব্যাংক সূত্র জানায়, আমানতকারীদের জমা টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে ব্যাংকটি এখনো সমস্যায় রয়েছে। নামে-বেনামে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে কম পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে ফেরত আসছে। এর ফলে ব্যাংকটি তারল্য সংকটে ভুগছে। সাধারণ গ্রাহকদের পাশাপাশি আমানতকারী বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত চাইছে, তবে ব্যাংকটি সবাইকে টাকা ফেরত দিতে পারছে না বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে গত আগস্টে পদ্মা ব্যাংককে আবারও বিশেষ সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত নগদ জমা (সিআরআর) বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ধার্য হওয়া ৫৫ কোটি টাকা জরিমানা পরিশোধে বাড়তি দুই বছরের বেশি সময় দেওয়া হয়েছে পদ্মা ব্যাংককে। এর ফলে আগামী ২০২৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে তাদের এই জরিমানা শোধ করতে হবে। আগে এই সময়সীমা ছিল ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পদ্মা ব্যাংকের ৮৯ কোটি টাকা জরিমানা মওকুফ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এই জরিমানা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে পদ্মা ব্যাংককে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৩৩ ধারা মেনে চলা থেকে অব্যাহতি দেয়। এই ধারার অধীনে এসএলআর বজায় রাখা সব ব্যাংকের জন্য আবশ্যক এবং এতে ব্যর্থ হওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সিআরআর ও এসএলআর বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে ১৪৪ কোটি টাকার জরিমানা মওকুফের আবেদন করে পদ্মা ব্যাংক।
অনিয়ম-জালিয়াতির কারণে সাবেক ফারমার্স ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে চারটি সরকারি ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ব্যাংকটির বড় অংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করে। পাশাপাশি পদ্মা ব্যাংকে আমানতও রাখে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন চৌধুরী নাফিজ সরাফত। এর ফলে ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হয় এবং এর নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক করা হয়। তবে আমানতকারীরা পুরো আস্থা ফিরে পাননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকটিকে নানা সুবিধা নিতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বাছবিচার ছাড়া সরকারের মৌখিক নির্দেশে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্রগুলো জানাচ্ছে।