কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন

অক্টোবরে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপে লেনদেন হঠাৎ দ্বিগুণ

  • অক্টোবরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে লেনদেন বাড়ে।

  • দেশের প্রায় ৮০ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপসে ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন।

বিদায়ী বছরের অক্টোবর মাসে হঠাৎ ঘরে বসে টাকা লেনদেনের সংখ্যা ও পরিমাণ বেড়ে গেছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপস ব্যবহার করে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রতি মাসের গড় লেনদেন ছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অক্টোবর শেষে তা হঠাৎ বেড়ে প্রায় ৭৯ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর আগে কোনো একক মাসে এত লেনদেন হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

আলাপকালে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ঘরে বসে ডিজিটাল লেনদেনের গ্রাহক ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে গত অক্টোবরে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করে। ওই মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি ২৮ অক্টোবর বড় সমাবেশ করে তারা। ফলে গ্রাহকদের বড় একটা অংশ সশরীর ব্যাংকে যাওয়ার পরিবর্তে অনলাইন মাধ্যমকে বেছে নেয়। তাতেই অক্টোবরে মাসে লেনদেন অনেক বেড়ে যায়। তবে কেউ কেউ বলছেন, তথ্যের ভুলে হঠাৎ এত লেনদেন বেড়ে গেছে। পরের মাসের তথ্য প্রকাশিত হলে তখন প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। 

বিদায়ী বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে গড়ে মাসে ৪৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। অক্টোবরে হঠাৎ লেনদেনে ৭৯ হাজার কোটি টাকায় ওঠে।  

দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অ্যাপসে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন ও ইন্টারনেট মাধ্যমে। লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই করেন ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকেরা। এরপর রয়েছে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের অ্যাপস নেক্সাস পে, সিটি ব্যাংকের সিটি টাচ, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা, ইস্টার্ণ ব্যাংকের স্কাই ব্যাংকিং। এ ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমটিবি স্মার্ট, ঢাকা ব্যাংকের গো অ্যাপসসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকের অ্যাপসে ভালো গ্রাহক রয়েছেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারিতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপসে গ্রাহক ছিলেন ৬৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯১ জন। ওই মাসে লেনদেন হয় ৩৩ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। গত জুনে গ্রাহক বেড়ে হয় ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮০ জন। আর লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকায়। গত সেপ্টেম্বরে গ্রাহক বেড়ে হয় ৭৭ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৬ জন। ওই মাসে লেনদেন বেড়ে হয় ৪৮ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। এর পরের মাস অক্টোবরে গ্রাহক আরও কিছুটা বেড়ে হয় ৭৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৯ জন। লেনদেন দাঁড়ায় ৭৮ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকায়।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষ এখন ঘরে বসে সেবা নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ ছাড়া গত অক্টোবরে নানা অনিশ্চয়তা ছিল। এই কারণে হঠাৎ লেনদেন বেড়ে গেছে। 

ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাপস আস্থা দুই বছর ধরে বাজারে আছে। ব্যাংকটি নতুন করে সাজিয়েছে অ্যাপসটি। যাতে মিলছে আর্থিক সেবার পাশাপাশি আরও অনেক সুবিধা। ব্যাংকটি অ্যাপসে লেনদেনে কোনো মাশুল নিচ্ছে না। ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অ্যাপসে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন। এরই মধ্যে অ্যাপসের গ্রাহক ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এখন মাসে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে অ্যাপসে। গ্রাহক ও লেনদেন বাড়াতে নানা অফার দিয়েছি আমরা, যাতে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি পায়।’ 

একসময় নগদ টাকা তুলে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে জমা দিতেন গ্রাহকেরা। কারণ, এক ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংক গ্রহণ করত না। পরে চেক গ্রহণ করলেও সেই টাকা জমা হতে বেশ কয়েক দিন সময় লেগে যেত। আবার টাকা পাঠানোর জন্য কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাও ছিল জমজমাট। কেনাকাটা ও লেনদেনের পুরোটাই হতো নগদ টাকায়। পরিষেবা বিল পরিশোধের জন্যও ব্যাংকগুলোতে লাইন লেগে থাকত। মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতেও প্রতিটি বাজার ও মহল্লায় ছিল একাধিক দোকান। কিন্তু ব্যাংকিং লেনদেনে এখন যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি। বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপসনির্ভর ব্যাংকিং সেবা। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপস দিয়ে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করছেন। 

 ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপসগুলোর মাধ্যমে হিসাবের স্থিতি জানা, যেকোনো ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর, পরিষেবা বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, টিকিট কেনা, কার্ডের বিল পরিশোধ, মাসিক সঞ্চয় হিসাবে টাকা জমাসহ নানা সুবিধা পাওয়া যায়।