অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতকে আরও সক্রিয় করা হবে

খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতকে আরও সক্রিয় করা হবে। পদক্ষেপ নেওয়া হবে হাইকোর্টে হওয়া রিট মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার। খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হবে না।

সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথাগুলো বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গভর্নরকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হবে না। হাইকোর্টে খেলাপি ঋণসংক্রান্ত রিট মামলা নিষ্পত্তির জন্য দুটি বেঞ্চ রয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, যাতে বেঞ্চ দুটি আগামী তিন মাস শুধু রিট মামলা পরিচালনা করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত মার্চের শেষে অর্থঋণ আদালতে দেশের ৬০টি ব্যাংকের ঋণসংক্রান্ত মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৭ হাজার ৫৯৩। এসব মামলার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা আটকে আছে।

অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভালো ব্যবসায়ীদের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যাঁরা ঋণ নিয়ে ঠিকমতো ফেরত দেন এবং ঠিকমতো কর দেন, তাঁদের কোনো সমস্যা হবে না। তাঁরাই ভীত হয়ে আছেন, যাঁরা বিগত সরকারের সময়ে নানাভাবে অনেক কিছু করেছেন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় অহেতুক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যেগুলোর অগ্রগতি বেশি হয়ে গেছে, সেগুলো কী করা যায় দেখছি। তবে যেগুলো মাত্র শুরু হয়েছে এবং পাঁচ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, সেগুলো বাতিলের চিন্তা করা হচ্ছে।’ কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য গাড়ি কেনা ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান রাজকীয় করা একেবারে বন্ধ হলেও পুলিশের জন্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য গাড়ি কেনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই একটা সমস্যা ছিল জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, খারাপ হয়ে গিয়েছিল ব্যাংক খাতের সুশাসন। বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব পালন করত না; বরং মহানন্দে টাকা ছাপিয়েছে। ব্যাংক খাতের খারাপ লক্ষণগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। আগে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর মিলে পছন্দমাফিক নিরীক্ষা করতেন। তাঁর প্রশ্ন, এমন কেন হবে?

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তবে এখন ইসলামী ব্যাংক ফিরে আসার পথে রয়েছে। কিছু ব্যাংক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। গভর্নরকে বলেছি, আরও কয়েকটি ব্যাংককে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ, ব্যাংকের দরজা বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকে ছুটে যাবেন। গভর্নর অত্যন্ত দক্ষ লোক। আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করছি, আমানতকারীদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। ব্যাংক খাতে হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনাই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য এবং কোনো ব্যাংকই বন্ধ হবে না।’

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, ‘যেসব দুর্বল ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তারা যাতে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারে- সে ব্যাপারে খুব দ্রুত উদ্যোগ দেখা যাবে।’

কারখানা নেই; কিন্তু শেয়ার বিক্রি হচ্ছে—পুঁজিবাজারের এমন চিত্র তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা। বিমা খাতের দুরবস্থার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কার্যালয় নিয়ে অনেক অভিযোগ। সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশনেও সমস্যা আছে। শুনলাম, কয়েকটি প্রিমিয়াম দেওয়ার পর কেউ যদি আর টাকা না দেন, তাহলে পলিসি বাতিল হয়ে যায় এবং এটাই হচ্ছে কোম্পানিগুলোর প্রধান আয়।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা আমাদের পীড়িত করে। তবে এটা এক দিনে হয়নি। সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখতে সম্প্রতি পেঁয়াজ, চাল, সয়াবিন তেল ইত্যাদি আমদানিতে শুল্কহার কমানো হয়েছে। অবশ্যই আলু ও পেঁয়াজের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে, যদিও তার অনেক কারণ আছে।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কষ্ট সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা মানুষকে ধৈর্য ধরতে বলি। কিন্তু এক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গেলে ছোট একটা ব্যাগে সামান্য বাজার পাওয়া যায়। আমিও তা টের পাই। কারণ, আমিও বাজারে যাই।’