ফারুক মঈনুদ্দীন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ট্রাস্ট ব্যাংক
ফারুক মঈনুদ্দীন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ট্রাস্ট ব্যাংক

বেনামি ঋণ কত, তা বের করতে হবে: ফারুক মঈনুদ্দীন

নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। বদল এসেছে মন্ত্রিসভায়ও। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, অর্থনীতিই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতির বর্তমান সংকট ও করণীয় নিয়ে প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়।

অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো বাজারভিত্তিক না করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনুদ্দীন। তিনি বলেন, ৬-৯ সুদহারও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা কাজে আসেনি। তখন অনেক ব্যাংক ৯ শতাংশের চেয়েও কম সুদে ঋণ দিয়েছে, এটাই বাজারভিত্তিক ব্যবস্থা। একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ২০১৯ সাল থেকে ৯ শতাংশ সুদহার চালুর জন্য চাপাচাপি করছিল। ব্যাংকগুলো এটা মানতে চায়নি, বাংলাদেশ ব্যাংকও রাজি ছিল না। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এটা কার্যকর করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল প্রথম আলোর ‘অর্থনীতি: নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন ফারুক মঈনুদ্দীন। তিনি বলেন, সুদহার ৬–৯ করার পরও বিনিয়োগ খুব বেশি বাড়েনি। একসময় দেশে সুদের হার ১৮ শতাংশ ছিল। তখনই বেশি বিনিয়োগ হয়েছিল, বেসরকারি খাতের উল্লম্ফন হয়েছিল।

অথচ বিশেষ মহলের চাপে সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হয়। সে জন্য তিনি মনে করেন, স্বজনতোষী পুঁজিবাদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশ।

ফারুক মঈনুদ্দীনের অভিযোগ, খেলাপি ঋণের একটা অংশ ইচ্ছাকৃত, আবার বেনামি ঋণও আছে।

বেনামি ঋণের আলাদা হিসাব হয় না। বেনামি ঋণের পরিমাণ কত, তা বের করতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে, খেলাপি ঋণ প্রকৃত অর্থে কত। বেনামি ঋণের দায়ভার ব্যাংকারদের ওপর পড়ে না। কারণ, ব্যাংকারদের বাধ্য করা হয় এসব ঋণ দেওয়ার জন্য। এর সঙ্গে ব্যাংকের উদ্যোক্তারা যুক্ত। দেশে খেলাপি ঋণ ক্যানসারে রূপ নিয়েছে। সময়মতো এর চিকিৎসা না নিলে তা দুরারোগ্য হয়ে যাবে।

ফারুক মঈনুদ্দীন বলেন, প্রতিবেশী ভারত ১৪ বছর আগে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ধরতে আইন করেছে। কিন্তু আমরা এটা করতে পারিনি। কারণ, সুবিধাভোগী পক্ষ এটা চায়নি।

দেশে এখন ৫-১০ লাখ টাকার বেশি সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা উচিত। এতে কর ফাঁকি বন্ধ হবে বলে মনে করেন ফারুক মঈনুদ্দীন।

অর্থনীতিতে নতুন সরকারের নানা চ্যালেঞ্জ আছে। এগুলোকে সরকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করছে কি না, তা বড় বিষয়। সরকার শক্ত হাতে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরানোর বিষয়টি তার ওপর নির্ভর করবে বলে মত দেন ফারুক মঈনুদ্দীন।  

ফারুক মঈনুদ্দীন বলেন, দেশের সড়কে নামলে বোঝা যায়, আইনের শাসন কতটা কাজ করে। দেশের মানুষের নৈতিক মানের অবক্ষয় হয়েছে, মূল্যবোধও কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে কারও বোধোদয় হবে কি না, সেটাই বড় বিষয়।