প্রথমবারের মতো শতকোটি টাকা মুনাফা করেছে মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) বিকাশ লিমিটেড। কোম্পানিটি বিপুল এই মুনাফা করেছে মাত্র ছয় মাসে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত। ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি এ সময় ১০৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
বিকাশের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে মুনাফার এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যদিও ছয় মাসের এই আর্থিক প্রতিবেদন অনিরীক্ষিত। বছর শেষে নিরীক্ষার পর চূড়ান্ত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় গতকাল বুধবার ব্যাংকটি বিকাশের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম ছয় মাসে বিকাশের মুনাফা হয়েছিল ৩৮ কোটি টাকা। এ বছর একই সময়ে তা প্রথমবারের মতো শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সে হিসাবে গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেড়েছে ৭১ কোটি টাকা বা ১৮৭ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। বিকাশ গত জানুয়ারি থেকে জুন সময়কালে আয় (ভ্যাট বাদে) করেছে ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা, গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩২ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে বিকাশের আয় ৪৩০ কোটি টাকা বা ২১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে সুদ আয়ও। এ বছরের প্রথমার্ধে সুদ আয় দাঁড়িয়েছে ৯০ কোটি টাকায়, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি।
বিকাশ লিমিটেড ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি প্রথম মুনাফার দেখা পায় ২০১৪ সালে। ওই বছর বিকাশ ১৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর মুনাফার ধারায় ছিল বিকাশ। ২০১৯ সালে এসে এটি লোকসানে চলে যায়। জানা যায়, ২০১৮ সালে বিকাশ অ্যাপ চালুর পাশাপাশি প্রযুক্তি খাত ও বাজারের উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানটি। মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেনকে দেশজুড়ে জনপ্রিয় করতে এবং এ বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে কয়েক বছর বিনিয়োগের এই ধারা অব্যাহত রাখা হয়। এর ফলে ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একটানা ৪ বছর লোকসান করে বিকাশ। সেই লোকসানের ধারা থেকে বেরিয়ে গত বছর থেকে মুনাফায় ফিরেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহককেন্দ্রিক ফিনটেক প্রতিষ্ঠান বিকাশ দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করেছে। এ জন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি ও গ্রাহকসহ অংশীজনদের ডিজিটাল শিক্ষা বাড়াতে ধারাবাহিক বিনিয়োগ করে আসছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি দেশব্যাপী শক্তিশালী এজেন্ট ও মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এসব উদ্যোগ বিকাশের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।