করোনা মহামারির সময় চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহালে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিপত্র জারি করেছিল, তার আলোকে সেই কর্মকর্তারা চাকরিতে পুনর্বহাল হওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।
করোনা মহামারির সময় দুর্বল কর্মনৈপুণ্যসহ নানা অজুহাতে ব্যাংকগুলো কর্মী ছাঁটাই করেছে। অনেক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করেছে ব্যাংকগুলো। এসব চাকরিচ্যুত, পদত্যাগ করা কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ফিরিয়ে এনে চাকরিতে বহাল রাখতে পরিপত্র জারি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সেই পরিপত্রের নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চাকরিচ্যুত সেই কর্মকর্তারা পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ নিজ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, পরিপত্রের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ (এফআইসিএসডি) ও গভর্নর বরাবর ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে চাকরি ফেরতের আবেদন করেও তাঁরা প্রতিকার পাননি।
পরবর্তী সময়ে অবৈধভাবে চাকরি হারানো কর্মীদের মধ্যে ৫০ জন আবেদনকারী হাইকোর্টে প্রতিকার চেয়ে রিট মামলা করেন। রিট পিটিশনের রুলে এবং রায়ে হাইকোর্ট সেই পরিপত্র অনুযায়ী আবেদনকারীদের চাকরিতে পুনর্বহালের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
এ পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতকে মানবিক ও কর্মিবান্ধব করতে এবং অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই পরিপত্র (২১/২০২১) বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই পরিপত্রে বলা হয়, ব্যাংক যেন ইচ্ছামাফিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই করতে না পারে, সে বিষয়ে বেশ আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকতর উজ্জীবিত হয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি কিছুসংখ্যক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ পাওয়া গেছে, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও করেনাকালীন শুধু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা বা অদক্ষতার অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে এবং চাকরি থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদত্যাগ করার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না, যা নির্দেশনার পরিপন্থী।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এভাবে চাকরিচ্যুত করা হলে কর্মরত অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে; তাঁদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা কমবে। ফলে ভবিষ্যতে মেধাবী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ব্যাংকের চাকরিতে আসতে অনীহা প্রকাশ করবেন। এটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকিং খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে।