আজ উদ্বোধন করা হয়েছে সিটি ব্যাংক ও বিকাশের উদ্যোগে পে–লেটার সেবা। এ সময় উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আজ উদ্বোধন করা হয়েছে সিটি ব্যাংক ও বিকাশের উদ্যোগে পে–লেটার সেবা। এ সময় উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিকাশ অ্যাপে ও সিটি ব্যাংকের ঋণে চালু হলো ‘পে-লেটার’ সেবা

জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা আরও সহজ করতে ‘পে-লেটার’ নামে নতুন এক জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ সেবা নিয়ে এসেছে সিটি ব্যাংক ও বিকাশ। ফলে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার পর বিকাশ অ্যাপ থেকে সিটি ব্যাংকের এই বিশেষ ঋণ নিয়ে সরাসরি মূল্য পরিশোধ করা যাবে। সাত দিনের মধ্যে ঋণের অর্থ পরিশোধ করলে গ্রাহককে সুদ দিতে হবে না।

আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘পে-লেটার’ সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ ও হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং মো. অরূপ হায়দার এবং বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ, প্রধান পণ্য ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজমল হুদা ও প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মীর নওবত আলীসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মূলত সিটি ব্যাংক ও বিকাশের ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ পরিষেবার আওতায় ‘পে-লেটার’ সেবা চালু করা হয়েছে। ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা সাপেক্ষে পে-লেটার সেবার মাধ্যমে গ্রাহককে ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সমন্বিত ঋণসীমা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা তাৎক্ষণিকভাবে পে-লেটার ও ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ উভয় সেবাই নিতে পারবেন।

বিকাশ জানিয়েছে, দেশের মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই পে-লেটার সেবা চালু করা হয়েছে। সারা দেশে বিকাশের ছয় লাখের বেশি মার্চেন্ট পয়েন্ট থেকে বিকাশ অ্যাপ দিয়ে কেনাকাটা করে পে-লেটার সেবা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন গ্রাহকেরা।

বক্তব্য দিচ্ছেন বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর

অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, ২০২১ সালে যৌথভাবে দেশে প্রথম ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ সেবা চালু করে সিটি ব্যাংক ও বিকাশ। সেবাটি চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ বার মোট ৭৪২ কোটি টাকা ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছেন গ্রাহকেরা। এসব ঋণের গড় আকার ৯ হাজার ২৭২ টাকা। ডিজিটাল ঋণের খেলাপি হওয়ার হার শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ, অর্থাৎ অন্যান্য ঋণের তুলনায় বেশ ইতিবাচক।

পে-লেটার সেবা চালু করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে মাসরুর আরেফিন বলেন, মূলত ছোট ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী বিদ্যমান ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণের প্রধান গ্রাহক। নতুন চালু হওয়া পে-লেটার সেবার মাধ্যমে ডিজিটাল ঋণসেবায় সাধারণ ভোক্তা ও ক্রেতাদের বড় অন্তর্ভুক্তি ঘটবে।

বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, বিভিন্ন ধরনের জরুরি কেনাকাটার প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে পে-লেটার সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেম তৈরি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। যেমন একজন কৃষক সার কিনতে এসে অর্থাভাবে কৃষিকাজ বন্ধ রাখবেন না। এই সেবার ফলে তিনি কাঁচামাল হাতে পাবেন, ফলে তাঁর উৎপাদনশীলতা অটুট রাখবে। পে-লেটার সেবা গ্রাহক ও মার্চেন্টকে ডিজিটাল পেমেন্টে আরও উদ্বুদ্ধ করবে।

কামাল কাদীর আরও বলেন, দেশে আর্থিক খাতে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ। একসময় ব্যাংক থেকে বিকাশে টাকা নেওয়ার সেবা চালু হলে অনেক ব্যাংকার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে বিকাশ থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সেবা চালু হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক থেকে বিকাশে টাকা আসার তুলনায় বিকাশ থেকে ব্যাংকে বেশি পরিমাণে টাকা জমা হচ্ছে। কারণ, গ্রামের ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা বিকাশে লেনদেন করেন। বিকাশে টাকা জমার পরিমাণ বেড়ে গেলে সেই অর্থ তাঁরা আবার ব্যাংকে রাখছেন।

সাত দিন সুদবিহীন কেনাকাটার সুযোগ

বিকাশ জানিয়েছে, পে-লেটার ঋণের জন্য বিবেচ্য গ্রাহক তাঁর প্রয়োজনীয় পণ্য বা সেবা নিয়ে বিকাশ অ্যাপে মার্চেন্টের কিউআর কোড স্ক্যান করার পর অথবা সরাসরি মার্চেন্ট নম্বর বসিয়ে টাকার পরিমাণ লিখবেন ও পে-লেটার অপশন নির্বাচন করবেন। পরবর্তী স্ক্রিনে তাঁকে সাত দিনে সুদবিহীন পরিশোধ অথবা তিন বা ছয় মাসে পরিশোধের যেকোনো একটি পদ্ধতি নির্বাচন করতে হবে।

সাত দিনে সুদবিহীন পরিশোধ পদ্ধতিতে গ্রাহক যদি সপ্তম দিনের মধ্যে ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ না করতে পারেন, তাহলে পে-লেটার সেবা তিন মাসের ক্ষুদ্রঋণে পরিণত হয়ে যাবে। এরপর বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।

বক্তব্য দিচ্ছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন

অন্যদিকে ছয় মাসে পে-লেটার ঋণ পরিশোধ পদ্ধতিতে গ্রাহককে শুরুতেই ২০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিতে হবে। বাকি ৮০ শতাংশ অর্থ পে-লেটারের মাধ্যমে সমান কিস্তিতে ভাগ হয়ে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রেও বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। উভয় ক্ষেত্রেই শূন্য দশমিক ৫৭৫ শতাংশ ভ্যাট ও পরিষেবা মাশুল যুক্ত হবে।

একজন ঋণগ্রহীতা মেয়াদ পূর্তির আগেও ঋণ পরিশোধ করতে পারেন; তখন তাঁকে শুধু সেই কয়েক দিনের জন্যই সুদ দিতে হবে। অগ্রিম ঋণ নিষ্পত্তিতে বাড়তি খরচ হবে না। ঋণগ্রহীতাদের নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গ্রাহকের বিকাশ লেনদেন ও সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট পলিসির ভিত্তিতে ঋণ পাওয়ার উপযুক্ততা ও ঋণের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। এই সেবার আওতাভুক্ত হতে গ্রাহককে অবশ্যই ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হবে। গ্রাহক বিকাশ অ্যাপ থেকে তথ্য হালনাগাদের মাধ্যমে ই-কেওয়াইসি গ্রাহক হিসেবে নিবন্ধন হালনাগাদ করে নিতে পারবেন।