রিজার্ভের জন্য স্বর্ণ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না। আগস্টে এ নিয়ে টানা চতুর্থ মাস তারা স্বর্ণ কেনা বন্ধ রেখেছে। শনিবার চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে বিষয়টি উঠে এসেছে।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, জুলাই মাস শেষে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে মজুত স্বর্ণের পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ৮ মিলিয়ন আউন্স বা ৭ কোটি ২৮ লাখ আউন্স। তবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়তি থাকায় চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মজুত স্বর্ণের মূল্যমান বেড়েছে। জুলাই মাসে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণের মূল্যমান ছিল ১৭৬ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন বা ১৭ হাজার ৬৭৬ কোটি ডলার; আগস্ট মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮২ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ২৯৮ কোটি ডলার।
চলতি বছর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমাবে—এমন ধারণা বছরের শুরু থেকেই শোনা যাচ্ছে। এতে ডলারের বিনিময় হার কমে যাবে, এই ধারণা থেকে বিনিয়োগকারীরা আবারও সোনার দিকে ঝুঁকেছেন। সেই সঙ্গে আছে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মজুত স্বর্ণের দামও বেড়েছে। অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ কেনা বৃদ্ধি করেছে।
চলতি বছর বিশ্ববাজারে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২১ শতাংশ। গত ২০ আগস্ট বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৫৩১ ডলারে উঠে যায়। এখন দাম তার চেয়ে কিছুটা কম।
সংবাদে বলা হয়েছে, গত চার মাস স্বর্ণ কেনা বন্ধের আগে পিপলস ব্যাংক অব চায়না টানা ১৮ মাস স্বর্ণ কিনেছে। ২০২৩ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ কিনেছে। কিন্তু চার মাস ধরে স্বর্ণ কেনা বন্ধ রাখায় চীনের বিনিয়োগকারীরাও স্বর্ণ কেনা হ্রাস করেছেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে চীন ২২৫ মেট্রিক টন স্বর্ণ কিনেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ কিনেছে ১ হাজার ৩৭ টন, অর্থাৎ চীন একাই কিনেছে বাকি সবার কেনা স্বর্ণের এক-চতুর্থাংশ। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকেরাও স্বর্ণের মুদ্রা, বার ও গয়না কিনছেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ কেনার এই ধারা আরও কয়েক বছর চলতে থাকবে। তাঁরা এই প্রক্রিয়াকে ডলারের বিকল্প তৈরির সংকেত হিসেবে দেখছেন।
বিনিয়োগকারীরা বৈশ্বিক অস্থিরতা ও মূল্যস্ফীতির সময় নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তাই করোনা–পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে চলমান সংঘাত স্বর্ণের সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
তবে স্বর্ণের বাড়তি দামের মধ্যেও চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিগগিরই স্বর্ণ কেনা শুরু করবে বলে সংবাদে বলা হয়েছে। সেটা অবশ্য যতটা না অর্থনৈতিক কারণে, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক কারণে। অর্থাৎ ডলারভিত্তিক রিজার্ভ–ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়া।
এদিকে শুধু চীন নয়, বিশ্বের উন্নত অর্থনীতিগুলোও এখন স্বর্ণ মজুতের দিকে ঝুঁকছে। ২০২৫ সালে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে ১৩ শতাংশ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনার মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বলে জরিপে জানা গেছে। অথচ এক বছর আগেও মাত্র ৮ শতাংশ ধনী দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পরিকল্পনা ছিল। এমনকি গোল্ড কাউন্সিলের জরিপ শুরু হওয়ার পর থেকে তখন পর্যন্ত সেটিই ছিল সর্বোচ্চ।
জরিপে অংশ নেওয়া বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা, আগামী পাঁচ বছরে তাদের মজুতে স্বর্ণের পরিমাণ অনেকটাই বাড়বে। গত বছরে এমন কথা বলেছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক।