ব্যাপকভাবে সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ও ঋণ হিসাবের তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউ গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ–সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়ে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নামে, যৌথ নামে বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের নামে কোনো লকার ও সঞ্চয়পত্রের তথ্য থাকলে তা-ও জানাতে বলা হয়েছে।
বিএফআইইউর কর্মকর্তারা জানান, এস আলম গ্রুপ ব্যাংক খাত থেকে মোট কত টাকা ঋণ হিসেবে বের করেছে, সেটি বের করতেই ব্যাংক হিসাব ও ঋণ হিসাবের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে এস আলম গ্রুপের সুবিধাভোগী ১৮ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ও ঋণ হিসাবের তথ্যও জানতে চেয়েছে বিএফআইইউ। তাঁরা হলেন প্রশান্ত কুমার দাস, মো. হেলাল, বদিউর রহমান, আবদুল করিম, সৈয়দ আলম, মো. হাছান, নুরুল আলম, আবদুল কুদ্দুস, দিল মোহাম্মদ, আলী আহম্মেদ, মো. সাকের মিয়া, আলমগীর ফয়সাল, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল আলম, সামছুল আলম, মো. ইউনুছ, নুরুল আফসার, মো. শাহজাহান আনছারী।
এদিকে গত মঙ্গলবার এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির তদন্ত শুরু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য একটি তদন্ত দল গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। গত জুন মাসে এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পান ভ্যাট কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো চট্টগ্রামের এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড।
একই দিন এস আলম পরিবারের সদস্যসহ ২৫ ব্যক্তি ও ৫৬ প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা ৬ ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম মূলত এস আলম নামেই বেশি পরিচিত। তিনি বেশির ভাগ সময় বিদেশে অবস্থান করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর পক্ষে পরিবারের সদস্যরা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অপরাধ করেছিলেন। শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই গত সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে দেশের ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পাশাপাশি একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমাসহ নানা খাতের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার অতিঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।