দেশের ব্যাংকগুলো ১২৩ টাকার বেশি দামে প্রবাসী আয়ের ডলার না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে একই রকম নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। ডলারের ক্রয়মূল্য ১২৬-১২৭ টাকায় ওঠার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক অতিরিক্তি দামে ডলার কেনার কারণে আমদানিকারকদেরও বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ছে। বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান এ তথ্য জানিয়েছেন।
দেশে গত দুই বছর ডলার বাজারে অস্থিরতা ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে বিনিময় হার–সংক্রান্ত কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে ডলার বাজার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
তবে ডিসেম্বরের মধ্যে আমদানি দায় পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়ার পর এক মাস ধরে ডলারের বাজার আবার কিছুটা অস্থির হয়ে উঠেছে। কিছু ব্যাংক ১২৬-১২৭ টাকায় ডলার কেনার কারণে বাজারে ডলারের বিক্রয়মূল্য বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে কঠোর হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ব্যাংকগুলো নিজেরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ১২৩ টাকার বেশি দামে ডলার কিনবে না। এমন সিদ্ধান্তের পর আজ মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রবাসী আয়ের ডলার কেনে। ফলে ডলারের দাম আবার কমতে শুরু করেছে।
ব্যাংকাররা জানান, ডিসেম্বরের শুরুতে পুরোনো আমদানি দায় পরিশোধের জন্য কয়েকটি সরকারি ও একটি বেসরকারি খাতের ব্যাংক বেশি দামে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনতে শুরু করে। এতে অন্য ব্যাংকও বেশি দামে ডলার কিনতে বাধ্য হয়। ফলে হঠাৎই ডলারের দাম বেড়ে যায়।
বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে বেশি দামে ডলার কেনায় ১৩টি ব্যাংককে চিহ্নিত করে সম্প্রতি তাদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাখ্যা চাওয়া ব্যাংকের তালিকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ২টি এবং বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংক ছিল। এরপর ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ডলারের দাম কমিয়ে আনে।
তবে ডলারের দাম বাড়ায় চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এত কম সময়ে এত বেশি প্রবাসী আয় এর আগে আসেনি। গত আগস্টে নতুন সরকার গঠনের পর প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। তবে এবার তিন সপ্তাহেই প্রবাসী আয় এল ২০০ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
প্রবাসী আয়ের এই জোরালো প্রবাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ গত সোমবার দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলারে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬ কোটি ডলারে। দীর্ঘদিন পর বিপিএম ৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ দুই হাজার কোটি ডলার ছাড়াল।