এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন।
কেমন চলছে সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা?
মাসরুর আরেফিন: ২০১৭ সাল থেকে আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং করে আসছি। এখন আমাদের এজেন্ট পয়েন্টের সংখ্যা ৫৩০। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই—মফস্বল ও গ্রামীণ জনগণের কাছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নারী উদ্যোক্তা ও কৃষকের কাছে আমানতের সমাধান, লেনদেনের সমাধান ও কম সুদে ঋণ পাওয়ার সুযোগ পৌঁছে দেওয়া। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরির কথা ভেবেই সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ও ক্ষুদ্র ঋণ বিভাগ একসঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আমাদের প্রায় ৬০ ভাগ এজেন্ট পয়েন্টে ক্ষুদ্রঋণ বিভাগের কর্মীরা যুক্ত থেকে নীরবে কম সুদে ক্ষুদ্রঋণের বিপ্লব ঘটাচ্ছেন। যে গ্রাহককে এনজিওরা ঋণ দিয়ে ২৪ শতাংশ সুদ নিচ্ছে, সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ৯ শতাংশ। আমরাই প্রথম ব্যাংক হিসেবে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে প্রেরকের আত্মীয়-পরিজনকে রেমিট্যান্স ঋণ দিচ্ছি। কাজটা আমাদের ৫৩০ এজেন্টের মাধ্যমেই করছি। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লেনদেন নিরাপদ করতে আমরা এনেছি লেনদেনের সময় টোকেন ম্যানেজমেন্ট বা ডুয়েল ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশনের ব্যবস্থা, এনেছি স্বয়ংক্রিয় ভয়েস কলের মাধ্যমে হিসাব জানার সুযোগ। এ ছাড়া এসএমএসের মাধ্যমে গ্রাহকদের হিসাবের তথ্য জানার সুযোগও চালু করেছি।
আমানতের চেয়ে সিটি ব্যাংকের এজেন্টরা ঋণ বেশি দিয়েছে। এর সুফল কতটা মিলছে?
মাসরুর আরেফিন: এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসা যেসব ব্যাংক করে, তাদের অনেকে গ্রামের আমানত ব্যাংকে আনার মাধ্যম হিসেবে এজেন্টদের ব্যবহার করে। আমরা এদের মধ্যে পড়ি না। গ্রামের আমানত শহরে নিয়ে আসায় কোনো সার্থকতা নেই। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বিশ্বাস করে ঋণ দেওয়াটাই এখন কাজের কথা। সে জন্যই আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি। এটি এ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে দেওয়া ঋণের স্থিতি এখন ৮২৪ কোটি টাকা, যেখানে আমানত ৬৬৭ কোটি টাকা। আমরা গ্রামের টাকা গ্রামীণ অর্থনীতিতেই ফিরিয়ে দিচ্ছি। পাশাপাশি শহরের আমানত গ্রামের উন্নয়নের জন্য ঋণ হিসেবে দিচ্ছি। আমাদের দেওয়া ঋণের ৩৫ শতাংশের ভোক্তাই নারী। এ ছাড়া বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা এই প্রান্তের গ্রহীতাকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স ঋণ দিয়ে যাচ্ছি।
শাখার দেওয়া ঋণ ও এজেন্টদের মাধ্যমে দেওয়া ঋণের পার্থক্যটা কী? এজেন্টদের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ কেমন আদায় হচ্ছে?
মাসরুর আরেফিন: শাখায় দেওয়া ঋণ ও এজেন্টের মাধ্যমে দেওয়া ঋণের মধ্যে তেমন কোনো গুণগত পার্থক্য নেই। শাখা ও এজেন্ট—দুই ক্ষেত্রেই ঋণের বেলায় আমাদের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রকৃত ব্যবসা পরিদর্শন করে ও দলিল দেখে ঋণ দিচ্ছি এবং ঋণ আদায় করছি। সিটি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে অনাদায়ি ঋণ মাত্র দশমিক ৭ শতাংশ।
ডিজিটাল সেবার দ্রুত বিকাশ হচ্ছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি উপশাখায় ঝুঁকছে অনেক ব্যাংক। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার ভবিষ্যৎ কী?
মাসরুর আরেফিন: ডিজিটাল সেবার অন্যতম উদাহরণ হলো এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্ট থেকে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে গ্রাহককে আমাদের সেবা দেওয়া। এটা সত্যি যে অধিকাংশ ব্যাংক উপশাখায় ঝুঁকছে। কিন্তু যত সহজে ও যত কম খরচে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো যায়, উপশাখার মাধ্যমে সেটা সম্ভব নয়। এজেন্ট ব্যাংকিং ইতিমধ্যে ইউনিয়ন, এমনকি গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। উপশাখা এখনো মূলত শহরকেন্দ্রিক বা খুব বেশি হলে উপজেলা পর্যন্ত গেছে। আমি বিশ্বাস করি, এজেন্ট ব্যাংকিং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাস্তবায়নে বিরাট ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাংলাদেশের সরকার আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য একটি করে ব্যাংক হিসাব থাকার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা নিশ্চিত করতে উপশাখার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলও লাগবে। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আরেক চেহারা হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। সে ক্ষেত্রে শাখা, উপশাখার চেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং বরং এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে।
মাসরুর আরেফিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দি সিটি ব্যাংক