ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপমুক্ত করতে আজও প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ব্যাংকটির পুরোনো কর্মীরা। ফলে ব্যাংকটিতে ২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা কেউ প্রবেশ করতে পারেননি। পাশাপাশি তাঁরা গতকালের গুলির ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।
এই কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের আদি নিবাস এই পটিয়া এলাকায়।
পটিয়া এলাকার ব্যাংকারদের পাশাপাশি আজও ব্যাংকে যাননি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলা, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ ও আলতাফ হুসাইন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিনসহ এস আলমপন্থী হিসেবে পরিচিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। তাঁদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন অন্য কর্মকর্তারা।
গতকাল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত হয়। এমনকি পটিয়া গোষ্ঠীর কর্মকর্তারা অন্য কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে গুলি করেন। এতে আহত হন ১০ জন। পুরোনো ক্ষোভের পাশাপাশি এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জানা গেছে, ব্যাংকটিতে প্রায় ২১ হাজার কর্মকর্তা কাজ করছেন। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন ২০১৭ সালের পরে। তাঁদের অধিকাংশের স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়।
ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়সহ সব শাখার অর্ধেক কর্মকর্তা পটিয়া এলাকার। সরকার পরিবর্তনের পর তাঁরা প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি শাখাগুলোতেও প্রবেশ করতে পারছেন না। ফলে ব্যাংকটির কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। সারা দেশে ব্যাংকটির ৩৯৫টি শাখা ও ২৫০টি উপশাখা আছে।
গতকাল ইসলামী ব্যাংকের ‘বৈষম্যবিরোধী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষাকারী ব্যাংকার সমাজের’ সমন্বয়ক আবু ওয়ালিদ চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন, ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। ১০ হাজারের বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের অনেকের যোগ্যতা নেই।
ব্যাংক থেকে এখনো নানাভাবে অর্থ বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপ। পাশাপাশি গ্রুপ–সংশ্লিষ্ট ঋণের নথিপত্র সরানো ও তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিছু কর্মকর্তা। সে জন্য ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দ্রুত ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন এবং এস আলমকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান আবু ওয়ালিদ চৌধুরী। পাশাপাশি গুলিবর্ষণকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। মালিকানা পরিবর্তনের পর এস আলম গ্রুপ ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু এই অর্থ ব্যাংকে ফেরত না আসার কারণে ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার দিয়ে ব্যাংকটির দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছে।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলা ব্যাংকে আসছেন না। তাঁকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। তাঁকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তিনি দেশের বাইরে আছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।