প্রবাসী আয়ে অক্টোবরেও বড় প্রবৃদ্ধি

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে যে ইতিবাচক ধারা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা প্রায় ২৮ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)। গত বছরের অক্টোবরে দেশে এসেছিল ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।

গত সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ডলারের আয় এসেছিল, যা ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি এবং মাস ভিত্তিতে এ বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগের মাস, অর্থাৎ আগস্টে প্রবাসী আয় আসে ২২২ কোটি ডলার। চলতি বছরে সর্বোচ্চ ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে জুন মাসে। সেটিই একক মাসের হিসাবে গত তিন বছরে মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। এর আগে সর্বোচ্চ আয় এসেছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে, ২৫৯ কোটি ডলার। প্রবাসী আয়সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রবাসী আয় হলো দেশের ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না অথবা কোনো দায় পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ে ডলার এলেও কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ডলার খরচ হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ শোধ করার সময়ও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় যত বাড়বে, দেশে ডলারের সংকট তত কমে আসবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নিয়েই তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ডলার-সংকট কাটাতে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা। এতে বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারছে ব্যাংকগুলো। প্রণোদনা দিয়ে ব্যাংকগুলো এখন ১২২ টাকায়ও প্রবাসী আয় কিনছে। তবে কোনো কোনো ব্যাংক এর চেয়ে বেশি দাম দিয়েও প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে প্রবাসী আয় কেনার যে প্রতিযোগিতা ছিল, এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি কমায় সব ব্যাংকের জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

‘ডলারের যে সংকট ছিল, তা অনেকটা কমে এসেছে। ডলারের জোগান আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রবাসী আয় বাড়াতে আমরাও নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছি।’
শওকত আলী খান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালী ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অক্টোবরের শেষ দিনেই আসে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৬৮৭ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল, চলতি বছরের একই সময়ে যা বেড়ে হয়েছে ৮৯৩ কোটি ডলার। ফলে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩০ শতাংশ।

জানা যায়, বিদেশি দায় পরিশোধের চাপ কমে আসা এবং প্রবাসী আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে খোলাবাজারে ডলারের সংকট অনেকটাই কেটেছে। ব্যাংকগুলোতেও ১২০ টাকা দামে নগদ ডলার মিলছে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলারের যে সংকট ছিল, তা অনেকটা কমে এসেছে। ডলারের জোগান আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রবাসী আয় বাড়াতে আমরাও নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলারে।