শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক

১০ কোটি টাকার বেশি ঋণের তদারকি শুরু 

ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

ঋণ অনিয়মের কারণে আলোচনায় থাকা শরিয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংককে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ ও আদায়ের তথ্য প্রতিদিন জমা দিতে বলা হয়েছে। নিবিড় তদারকির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ব্যাংক পাঁচটি হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী
ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো চট্টগ্রামের একটি গ্রুপের মালিকানাধীন।

এদিকে অনিয়মের কারণে সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর অন্য তিন ব্যাংকে বড় অনিয়মের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে বেশ আগেই ধরা পড়ে।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, তদারকির অংশ হিসেবে এমন তথ্য নিয়মিত চাওয়া হয়। বিভিন্ন আলোচনার কারণে এখন নিবিড় তদারকি জোরদার করা হচ্ছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত কাজের অংশ।

৫ ব্যাংককে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ১০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ বিতরণ, আদায় ও ঋণ স্থিতির তথ্য প্রতিদিন জানাতে হবে। এতে মেয়াদি, চলতি ও ডিমান্ড ঋণের তথ্য আলাদাভাবে চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ জন্য একটি ছক নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে ঋণের আকার অনুযায়ী তথ্য চাওয়া হয়েছে। এগুলো ১০-২০ কোটি, ২০-৫০ কোটি, ৫০-১০০ কোটি, ১০০-৫০০ কোটি ও ৫০০ কোটির বেশি ঋণ।

জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এমন তথ্য চাওয়ার কথা শুনেছি।’

আমানত, ঋণ ও সম্পদের বিবেচনায় ইসলামী ব্যাংক হলো দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক। গত বুধবার ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ‘এখন ব্যাংকের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। যে পরিমাণ টাকা জমা হচ্ছে, উত্তোলন তার চেয়ে কিছুটা কম। চলতি মাসে দুই হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে। আশা করছি, ডিসেম্বরে ভালো টাকা আদায় হবে। সবার সহযোগিতা পেলে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’

চলতি বছর ইসলামী ব্যাংক থেকে কাগুজে বিভিন্ন কোম্পানির নামে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে এই অর্থ নেওয়া হয়। গত নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে তুলে নেওয়া হয় ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নেয় এ কোম্পানিগুলো।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়ে, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ ও এসআইবিএলের ২৩ শতাংশ ঋণ খেলাপিযোগ্য। একইভাবে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঋণেও বড় অনিয়ম হয়। ব্যাংকটির সিংহভাগ ঋণ খেলাপিযোগ্য। আবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের গুলশান ও খাতুনগঞ্জ শাখায় বড় অনিয়ম পায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এমন পরিস্থিতিতে ইসলামি ধারার এসব ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে। ফলে ঋণ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় টাকা ধার দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।