পর্ষদ ও এমডির বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে 

অভিযুক্ত পরিচালক পদত্যাগ করতে পারবেন না। এক পরিবার ও তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ৫ জন পরিচালক হতে পারবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কারণে আমানতকারীদের অর্থের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ আদায়ে মামলা করতে পারবে ওই ব্যাংক। মামলা করার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে নতুন এই উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে। 

জাতীয় সংসদে গত ২৬ জুন ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস হয়। এতে পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করার পাশাপাশি খেলাপিদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ প্রদানসহ নানা পরিবর্তন আনা হয়। আমানতকারীদের অর্থের ক্ষতি হলে তা আদায়ে সংশোধিত আইনে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে কার্যকর হলে ব্যাংক খাত ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কারণ, ব্যাংকগুলোতে যেসব অনিয়ম হয়, তা চেয়ারম্যান, পরিচালক ও এমডিদের অগোচরে থাকে না। অবশ্য কোনো কোনো ব্যাংকের মালিকেরা আড়ালে থাকতে প্রতিনিধি দিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করেন। বিশেষ করে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে এমনটা ঘটে। নতুন আইনেও তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকবেন। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। তবে কতটা কার্যকর হয়, সেটা দেখার বিষয়। এসব আইন কার্যকর করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগী হতে হবে। দোষীদের অপসারণ করে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এখনকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে এটা সম্ভব হবে কি না, তা সময়ই বলবে।’ 

মামলা করার সুযোগ 

আইনের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সন্তুষ্ট হয় যেকোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক বা এমডি নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেন বা ক্ষতিকর কার্যকলাপের মাধ্যমে ব্যাংকের তহবিলের অপব্যবহার কিংবা মানি লন্ডারিং তথা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নসংক্রান্ত অপরাধ করেছেন, তাহলে জনস্বার্থে তাঁদের পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। 

এতে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের অপসারিত চেয়ারম্যান, পরিচালক বা এমডির ক্ষতিকর কার্যকলাপের কারণে কোনো ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি হলে তাঁদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্য টাকা আদায়ের জন্য ওই প্রতিষ্ঠান যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে। আর এই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবে। সে ক্ষেত্রে আদালত আইনের ৮৫ ধারা অনুযায়ী ব্যাংকের দাবি করা অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য আদেশ দিতে পারবেন। অর্থ ফেরত দিতে না পারলে তাঁদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিতে পারবেন আদালত। 

এসব আইন কার্যকর করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগী হতে হবে। দোষীদের অপসারণ করে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এখনকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে এটা সম্ভব হবে কি না, তা সময়ই বলবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত কোনো ঋণ আদায় না হলে গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মাঝেমধ্যে ব্যাংকের নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়। খুব কম ক্ষেত্রে এমডির নাম আসে। শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় শীর্ষ পর্যায়ের নাম আসে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এখন কাউকে অপসারণ করার পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে ব্যাংক, এই নির্দেশনা দেওয়া হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, অনিয়মের জন্য চেয়ারম্যান, পরিচালক ও এমডিদের অপসারণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। 

অভিযুক্ত পরিচালকদের পদত্যাগে না 

সংশোধিত আইনে যুক্ত করা হয়েছে, কোনো পরিচালককে অপসারণের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক নোটিশ দেবে। তবে কোনো পরিচালকের বিরুদ্ধে নোটিশের কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় পদত্যাগ করলে তা কার্যকর হবে না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অনেক পরিচালক পরিস্থিতি বুঝে আগেই পদত্যাগ করেন। ফলে তাঁদের ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। নোটিশপ্রাপ্তদের পদত্যাগের সুযোগ রহিত করার ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা সহজ হবে। 

এক পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচ প্রতিনিধি 

ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনীতে এক পরিবার থেকে চারজনের পরিবর্তে তিনজন পরিচালক রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কোনো পরিবারের তিন সদস্যের বাইরে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থাকলে তাদের পক্ষে আরও দুজন প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবেন। ফলে এক পরিবার ও তাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এক ব্যাংকে পরিচালকের সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে পাঁচ। আগে এক পরিবার থেকে চারজনের পরিচালক থাকার বিষয়টি নির্দিষ্ট থাকলেও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা নির্দিষ্ট ছিল না। ফলে কোনো কোনো ব্যাংকে এক পরিবার ও তাদের প্রতিনিধিরাই শুধু পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, সংশোধিত আইনটি পূর্ণাঙ্গ পরিপালনে সময় লাগবে।