নগদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার বলেছেন, ‘মোবাইলে আর্থিক সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান নগদের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। প্রশাসক নিয়োগ করায় আগের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদেও কেউ নেই। এখন থেকে আমরা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করব। এমডি ছাড়া অন্য কর্মীরা আগের মতোই কাজ চালিয়ে যাবেন।’
আজ বৃহস্পতিবার ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা (এমএফএস) কোম্পানি নগদের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। এ সময় ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক আবু তালেবসহ দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বুধবার নগদে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রশাসক বসানোর এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর রাতেই প্রতিষ্ঠানটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আজ সকাল ৯টার দিকে নগদের কার্যালয়ে যান প্রশাসকসহ বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা। এরপর তাঁরা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বুঝে নেন।
পরে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন নতুন দায়িত্ব নেওয়া কর্মকর্তারা। প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার বলেন, নগদের ৯ কোটি গ্রাহক রয়েছেন। সম্প্রতি নগদ–সংক্রান্ত নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা পুরো ডিজিটাল আর্থিক সেবা খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ও এতে বিরূপ প্রভাব রাখতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডাক বিভাগ থেকেও জনবল পাঠানো হয়েছে।
মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার বলেন, ‘নগদের কর্মীরা আগের মতো কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। আমরা তাঁদের সহায়তা করব।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদনের বিষয়ে প্রশাসক বলেন, ‘নগদ ডাক বিভাগের সেবা। প্রধান এজেন্ট হিসেবে নগদ এই কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা সাময়িক অনুমোদন দিয়েছি। এভাবেই সেবাটি চলছে। এখন পূর্ণাঙ্গ অনুমোদনের বিষয়ে কাজ করা হবে।’
নগদ কীভাবে চলছে, এই প্রশ্নের জবাবে ডাক বিভাগের পরিচালক আবু তালেব বলেন, পরিচালন চুক্তির আওতায় নগদ তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নগদের পরিচালনায় ডাক বিভাগের কোনো অংশগ্রহণ নেই।
নগদের লোগোয় ডাক বিভাগের চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে কেন, তা জানতে চাইলে মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার বলেন, ‘আমিও মনে করি লোগোয় ডাক বিভাগের অংশগ্রহণ থাকা উচিত।’ নগদের কার্যক্রমের নিরীক্ষা হবে কি না, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা নিজেরাই খতিয়ে দেখব সবকিছু ঠিক আছে কি না। এরপর প্রয়োজন হলে নিরীক্ষা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগ মিলে নগদের সবকিছু দেখবে। আমরা ছেড়ে দেওয়ার আগে অবশ্যই একটা নিরীক্ষা করে যাব।’
নগদের নির্বাহী পরিচালক শাফায়েত আলম বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে নগদের সাড়ে ৯ কোটি গ্রাহক হয়েছেন। স্বাভাবিক কারণে আমরা অন্যদের বাজার শেয়ার নিয়েছি। অনেকে এতে সংক্ষুব্ধ হয়েছে। গুজব দূর করতে প্রশাসক নিয়োগ অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, যুগ্ম পরিচালক আনোয়ার উল্লাহ, পলাশ মন্ডল, আবু ছাদাত মোহাম্মদ ইয়াছিন, উপপরিচালক চয়ন বিশ্বাস ও আইয়ুব খান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ডাক অধিদপ্তরের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল খন্দকার শাহনূর সাব্বির ও এ কে এম মনিরুজ্জামান।
মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) বিকাশের পরই এখন নগদের অবস্থান। তবে প্রতিষ্ঠার পর প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনে চলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও এতে সরকারের অংশীদারত্ব নেই। নগদের মালিকানায় বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন সাবেক সরকার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় মোবাইলে আর্থিক সেবা পরিচালনার জন্য থার্ড ওয়েভ নামের একটি কোম্পানিকে কাজ দেয়।