প্রথম আলো আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এ খাতের নীতিনির্ধারক, ব্যাংকের পরিচালক, ব্যাংকার, বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী ফাহমিদা খাতুন গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংক খাত সম্পর্কে তাঁর মতামত দেন।
ডলারের বিনিময় হার এখন খোলাবাজারে ১২১ টাকা। প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা যুক্ত হওয়ার পর এখন ব্যাংক থেকে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি ভালো। কথা হলো এখন কি প্রণোদনা দেওয়ার যৌক্তিকতা থাকে? তবে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর রীতি দীর্ঘদিনের। সে ধারা নিরুৎসাহিত করতে আরও কিছুদিন এ প্রণোদনা রাখা যেতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে সে ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ প্রণোদনা অপচয় বলব না। তবে আরও উৎপাদনশীল খাতে তা বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
সেই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার কথা হয়েছে। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতো আরেকটি বিভাগ থাকলে স্বার্থের গুরুতর সংঘাত সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক আইনে বলা আছে, সরকারের কোনো কর্মকর্তা গভর্নর বা ডেপুটি গভর্নর হতে পারবেন না; কিন্তু পরপর দুজন গভর্নর আমলাতন্ত্র থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হোক। সেই সঙ্গে পরবর্তী কোনো রাজনৈতিক সরকার যেন এর পুনরাবৃত্তি করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
ব্যাংক খাত রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। মানুষের মনে একধরনের ভীতি আছে। অনেকেই জানতে চান, কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ? নতুন সরকার আসার পর মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হলেও অনিশ্চয়তার বোধ এখনো আছে। সে জন্য বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার। এ ছাড়া কোনো ব্যাংককে কি ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না? এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, সে রকম পরিকল্পনা নেই। যত রুগ্ণই হোক, কোনো ব্যাংককে মরতে দেওয়া হবে না। সেটা হলে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া দরকার; তা না থাকলেও পরিষ্কার বলে দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে শক্তিশালী ব্যাংক কোনগুলো, তা বলা উচিত।
রুগ্ণ ব্যাংক টিকিয়ে রাখা হলে ভালো ব্যাংকেও এর প্রভাব পড়ে। এ খাত মানুষের আস্থার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা ঋণ তৈরি হয়, অর্থাৎ পুরো বিষয়টি বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ভালো ব্যাংকও যেকোনো সময় ধসে যেতে পারে। সে জন্য সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে পরিষ্কার বার্তা থাকা উচিত, কোন ব্যাংকগুলো কী অবস্থায় আছে।
রুশাদ ফরিদী: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়