ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহির বলেছেন, ‘ব্যাংকগুলো থেকে আমানতকারীদের ৩-৪ বিলিয়ন (৩০০–৪০০ কোটি) ডলার নাই হয়ে গেছে। এই অনিয়ম স্বীকার করতে হবে। এরপর মূলধন পুনর্গঠন করে এসব গর্ত পূরণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করা যাবে। এরপরও এই বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। ব্যাংক এমন প্রতিষ্ঠান, যেখানে অনিয়ম করে পার পাওয়ার উপায় নেই। যারা অনিয়ম করেছেন, তাঁদের যথাযথ শাস্তি হোক, এটা আমাদের চাওয়া। তাঁদের শাস্তি যেন দেশের মানুষ দেখতে পায়।’
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শরীফ জহির কথাগুলো বলেন। এই অনুষ্ঠানে ৬টি পৃথক আমানত তথা জমা হিসাব ও ঋণ পণ্য চালুর ঘোষণা দেয় ব্যাংকটি। ইউসিবির নতুন সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে ‘স্বাধীন’ (শূন্য বেকারত্ব), ‘সমতা’ (শূন্য দারিদ্র্য) ও ‘সবুজ সঞ্চয়’ (শূন্য কার্বন)। তিনটি নতুন ঋণ প্যাকেজ হলো ইউসিবি ‘প্রগতি’ (শূন্য দারিদ্র্য), ইউসিবি ‘সবুজ সমৃদ্ধি’ (শূন্য কার্বন) ও ইউসিবি ‘সূচনা’ (শূন্য বেকারত্ব)।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবিত থ্রি জিরোস লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন পণ্যগুলো চালু করে ইউসিবি। ড. ইউনূস তাঁর ‘আ ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরোস’ শীর্ষক গ্রন্থে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য কার্বন নিঃসরণ ও শূন্য বেকারত্বের (থ্রি জিরোস) এক বিশ্বের স্বপ্ন দেখেছেন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও তরুণ প্রজন্মকে সক্ষম করে তুলতে পারে এমন সব পণ্য চালু করা হয়েছে বলে জানায় ব্যাংকটি।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, ইউসিবি ‘প্রগতি’র আওতায় গ্রাহকেরা জামানত ছাড়া ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এটি নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষকে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনে এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে। ইউসিবি ‘সূচনা’র মাধ্যমে গ্রাহকেরা নতুন ব্যবসা শুরুসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থায়ন সুবিধা পাবেন। এটি নানা সম্ভাবনা তৈরি করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করবে। ইউসিবি ‘সবুজ সমৃদ্ধি’র আওতায় পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোতে অর্থায়ন করা হবে। এর মধ্যে থাকবে নবায়নযোগ্য শক্তি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং প্রকল্প, যা কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এসব ঋণের সুদের হার হবে বাজারের চেয়ে অনেক কম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহির বলেন, ‘দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। মুহাম্মদ ইউনূস রিসেট বাটন চাপ দিতে বলেছেন, তা ১৯৭১ সাল থেকে নয়। গত ১৬ বছরে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা যা হয়েছে, তা পুনর্গঠনের কথা বলেছেন।’
ইউসিবি ব্যাংকের অনিয়ম প্রসঙ্গে শরীফ জহির বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে অনিয়ম ধরতে নিরীক্ষা হচ্ছে। ঋণসংক্রান্ত একটি নিরীক্ষায় দেখেছি সিদ্ধান্তের আগে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো মতামত দেয়নি। এমনিতেই তা পর্ষদে অনুমোদন হয়ে গেছে।’
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেন, ‘ব্যাংকে সংখ্যা যত বেশি হয়, সবাই তত বেশি খুশি হন। বেশি আমানত, বেশি ঋণ ও বেশি মুনাফা এসব নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এবার আমরা পুরো উল্টো তত্ত্বে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন শূন্য তত্ত্বের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা এই সেবাপণ্যগুলো চালু করেছি। এর মাধ্যমে আমরা একটা মূল্যবোধের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গ্রামীণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হাই খান।