মার্কিন ডলার
মার্কিন ডলার

ডলারের কারণে মুনাফা কমতে পারে ব্যাংকগুলোর, বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক

  • বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনই প্রধান চ্যালেঞ্জ।

  • উৎপাদনশীল ও বিনিয়োগবান্ধব খাতগুলোতে ঋণ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে।

  • বাজারে নিবিড় তদারকি করতে হবে।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও তহবিল খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমতে পারে। কারণ, বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় টাকার অবমূল্যায়নের কারণে যাঁরা বিদেশি ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের তহবিল খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনা-পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের দিকে গতিশীল হলেও ২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়।

এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। এ রকম প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বৈশ্বিক আর্থিক খাতগুলোর ওপর সৃষ্ট চাপের কারণে বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত কতিপয় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ডলার বিক্রি করায় তা ব্যাংক খাতের তারল্যে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রেখে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন বর্তমানে আর্থিক খাতের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এখন উৎপাদনশীল ও বিনিয়োগবান্ধব খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ অব্যাহত রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সংকোচনমুখী নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাতে মূল্যস্ফীতিকে সীমিত পর্যায়ে রেখে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি সরকার নিবিড়ভাবে বাজার তদারকি করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পাশাপাশি রাজস্ব নীতির ক্ষেত্রে নেওয়া চলমান পদক্ষেপগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনমতে, সাম্প্রতিক কালে খেলাপি ঋণের হার সামান্য কমলেও ক্রমাগত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নজরদারি আরও জোরদার করার ইঙ্গিত বহন করছে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিতকরণ, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বন্ড বাজারের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বন্ড বাজারের ভূমিকা অপরিসীম হলেও দেশে বন্ড বাজার তেমন বিকশিত হয়নি। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তব্যাংক লেনদেনে নির্ভরশীলতা কমিয়ে বন্ড ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদি তহবিল সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিদায়ী ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে প্রকৃত বৈদেশিক সম্পদ কমেছে। কারণ, আর্থিক হিসাব ঘাটতিতে রয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ ও তারল্যের ওপর চাপ থাকায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে।

ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য কমে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা হয়েছে, যা অক্টোবরে আরও কমে হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে আগের প্রান্তিকের চেয়ে বেশি তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকে আলোচ্য সময়ে ৪৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৩৭ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।

নানা অনিয়মের কারণে ইসলামি ধারার পাঁচটি ব্যাংক গত বছর থেকে তারল্যসংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংককে জামানত ছাড়া টাকা ধার দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।