বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংকের টাকা আবার ঘরে ঢুকেছে

ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়িতে বা নিজের কাছে রাখার প্রবণতা আবার শুরু হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে এই প্রবণতা দেখা গেছে। ওই মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর আগে গত বছরের জুন মাসে হঠাৎ করে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়েছিল ৩৬ হাজার ৮৪ কোটি টাকা। এর পর থেকে তা কমে আসছিল।

গত নভেম্বরে হঠাৎ করে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার এই তথ্য পাওয়া গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে। এর কারণ সম্পর্কে খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনে খরচের জন্য কেউ কেউ টাকা তুলে ঘরে নিয়ে রেখেছিলেন। আবার মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ও শীতের মৌসুমে পারিবারিক অনুষ্ঠানের কারণেও ব্যাংক থেকে টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছিল। পাশাপাশি কয়েকটি শরিয়া ব্যাংকের অনিয়মের খবর প্রকাশিত হওয়ার কারণে কিছু আমানতকারীর মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়। তবে জানুয়ারি মাসে সেই প্রবণতা অনেকটা কেটে গেছে।

৯-৬ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়ার পর ঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ঋণের সুদহার আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে ১২ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সমানতালে বেড়েছে আমানতের সুদহারও। কোনো কোনো ব্যাংক ৯ শতাংশের বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এসব পদক্ষেপের ফলে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অক্টোবর মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা, যা নভেম্বরে বেড়ে হয় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।

ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ বাড়লেও গত বছরের নভেম্বরে আমানতের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ৫ গুণের বেশি। নভেম্বরে ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়ে প্রায় ৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। ওই মাসে ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। গত বছরের অক্টোবরে ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা, নভেম্বরে যা বেড়ে হয় ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ ১৬ লাখ ১ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যসংকট তৈরি হয়। শরিয়াভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংকের পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংকও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাহিদামতো তারল্য রাখতে ব্যর্থ হয়।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুদহারের নির্দিষ্ট সীমা তুলে দেওয়ার বাইরের টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছিল। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে খরচ করছেন অনেকে। আবার শীতের সময় বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠান বেশি হয়। দেশের বাইরেও অনেকে অর্থ খরচ করেন। এ জন্যও টাকা উত্তোলন বেড়ে গেছে। তবে এসব টাকা আবার হাত ঘুরে ব্যাংকে ফিরে আসবে, যদিও এ জন্য কিছুটা সময় লাগবে।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, কিছু ব্যাংকে অনিয়মের খবরেও গ্রাহকেরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তাঁরা জমা টাকার বিষয়ে আমাদের কাছে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।

প্রথম প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, নিজেদের জমা টাকার বিষয়ে গ্রাহকদের খোঁজখবর নেওয়ার প্রবণতা নির্বাচনের আগে বেশি ছিল। ওই সময় অনেকে টাকাও তুলে নেন। তবে চলতি মাসে এঁদের অনেকেই আবার টাকা নিয়ে ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছেন।

ব্যাংক থেকে টাকা বাইরে চলে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের জুলাইয়ে সুদহার নির্ধারণের নতুন নিয়ম চালু করে। সুদের হারের ৯ শতাংশের সর্বোচ্চ সীমা থেকে বের হয়ে স্মার্ট সুদহার নামে নতুন নিয়ম চালু করে। স্মার্ট হলো সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানুয়ারির জন্য স্মার্ট ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে ব্যাংকগুলো ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যোগ করতে পারে। ফলে ঋণের সুদহার বেড়ে এখন হয়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।