নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারি-বেসরকারি ১৪ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এই দায়িত্ব পালন করছেন। দেশে ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। ফলে দেশের এক-চতুর্থাংশ ব্যাংক এখন পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক দিয়ে চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ আগ থেকেই অনিয়ম ধরা পড়া ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে আসছে। আবদুর রউফ তালুকদার গত ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংককে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। গত ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করা হবে। প্রতিটি ব্যাংকের অগ্রগতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করবেন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যাংকগুলোতে সমন্বয়ক বসানো শুরু হয়। ইতিমধ্যে পাঁচ ব্যাংকে সমন্বয়ক বসানো হয়েছে। ব্যাংক পাঁচটি হলো এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। আর আগে থেকেই পর্যবেক্ষক দেওয়া আছে—সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে। নতুন করে অনিয়ম ধরা পড়ায় পর্যবেক্ষক বসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আরও কয়েকটি ব্যাংক দুর্বল হওয়ার তথ্য পরিদর্শনে ধরা পড়ছে। আগে যেসব ব্যাংকে পর্যবেক্ষক দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। ফলে এই মডেল ব্যর্থ হলে পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক বসানো ছাড়া উপায় থাকবে না।
ব্যাংক খাতে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ফলে চলতি বছরের গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে, অর্থাৎ ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। খেলাপিতে পরিণত হয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকের ২ হাজার ৯৭০ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।